বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের রামপালে এগারো বছর বয়সী এক মাদ্রাসা ছাত্রী ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। ধর্ষণ মামলার প্রধান অভিযুক্ত মুদি দোকানি ফেরদৌস শেখকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন এবং ধর্ষণের শিকার শিশুটির তথ্য গোপণ ও আলামত নষ্ট করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া মাদ্রাসা অধ্যক্ষ ওলিয়ার রহমানকে জেলগেটে একদিনের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

বুধবার বিকেলে বাগেরহাটের চিফ জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক স্বপন কুমার সরকার শুনানী শেষে ওই দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ওই রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।

গত রবিবার পুলিশ গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করলে আদালতের বিচারক আজ মঙ্গলবার শুনানী শেষে এই আদেশ দেন। এদিকে, ঘটনার চারদিন পার হলেও অন্য দুই এজাহারভুক্ত আসামী গ্রেপ্তার হওয়া অধ্যক্ষ ওলিয়ার রহমানের স্ত্রী ও মাদ্রাসার অন্য এক শিক্ষককে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপরে শিশুটির এক মামা বাদী হয়ে মাদরাসা অধ্যক্ষ ওলিয়ার রহমান ও মুদি দোকানী ফেরদৌস শেখসহ চারজনের বিরুদ্ধে রামপাল থানায় মামলা করলে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই দিন দুপুরে পুলিশ ফেরদৌস শেখ (১৮) নামে এক মুদি দোকানিকে এবং রাতে মাদরাসা অধ্যক্ষ ওলিয়ার রহমানকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক তদন্তে মাদরাসা অধ্যক্ষ ওলিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে শিশুটিকে ধর্ষণের তথ্য গোপণ ও আলামত নষ্ট করার অভিযোগের সত্যতা পায় পুলিশ।

এর আগে গত শনিবার দুপুরে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। গ্রেপ্তার ফেরদৌস শেখ রামপাল উপজেলার শরাফপুর গ্রামের লুৎফর শেখের ছেলে। ওলিয়ার রহমান স্থানীয় শরাফপুর কারামাতিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।

রামপাল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. তুহিন হাওলাদার রাতে এই প্রতিবেদককে বলেন, মাদ্রাসা ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামী মুদি দোকানি ফেরদৌস শেখ এবং মাদ্রাসা অধ্যক্ষ ওলিয়ার রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে চিফ জুডিশিয়াল আদালতে আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক দীর্ঘ শুনানী শেষে ফেরদৌস শেখকে তিনদিনের এবং মাদ্রাসা অধ্যক্ষ ওলিয়ার রহমানকে জেলগেটে একদিনের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। তাদের আগামীকাল বুধবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

শিশুটিকে ধর্ষণের পর তথ্য গোপণ ও ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে মাদরাসা অধ্যক্ষ ওলিয়ার রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি করে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যেদিন ঘটনাটি ঘটে সেদিন ওই মেয়েটি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে। কিন্তু তারা বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করে অপরাধ করেছেন। কেন মাদ্রাসা অধ্যক্ষ তথ্য গোপণ করলেন তা পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে বলে ধারনা করছি।

ফকিরহাটে নানা বাড়িতে থেকে রামপাল উপজেলার একটি মাদরাসার ছাত্রী নিবাসে থেকে পড়ালেখা করছিল শিশুটি। মাদরাসার সামনের মুদি দোকানি ফেরদৌসের সাথে মেয়েটির পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে গত ১১ এপ্রিল রাতে মুদি দোকানি ফেরদৌস সুকৌশলে মেয়েটিকে একটি ঘরে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

(এসএকে/এসপি/এপ্রিল ২৪, ২০১৯)