পটুয়াখালী প্রতিনিধি : অপহরণের একমাসেও উদ্ধার হয়নি সংখ্যালঘু পরিবারের ১৩ বছরের স্কুল পড়ুয়া কিশোরী। তাকে উদ্ধারের আশায় বাবা নিঠুর চন্দ্র গাইন, মা শেফালী রাণী ও মাসি (খালা) অঞ্জু রাণী প্রতিদিন কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে শহরে এসে থানা পুলিশসহ সমাজের গণ্যমান্যদের দ্বারস্ত হচ্ছেন। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মিলছে না। পরিবার দু’টির অন্য সস্যরাও বাকরূদ্ধ হয়ে গেছেন। উপরন্তু অপহরণকারীরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়েই যাচ্ছে। এতে পরিবারটির সস্যরা আরও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। যদিও থানার পুলিশ অতিদ্রুত অপহৃতকে উদ্ধার এবং আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে।

অপহৃত কিশোরীর মাসি অঞ্জু রাণী গত ১ এপ্রিল সোমবার রাতে তার বড়বোন শেফালী রাণীর মেয়েকে অপহরণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন মন আইন ২০০০ সংশোধনী ২০০৩ এর ৭/৩০ ধারায় গলাচিপা থানায় মামলাায়ের করেন। যার মামলা নম্বর-০১/৮৩।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, অপহরণের এ ঘটনাটি ঘটেছে গত ২২ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায়। এ সময় ওই স্কুলছাত্রী তার খালাতো (মেসোর মেয়ে) ছোট বোন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী রীতামনিকে নিয়ে গলাচিপা উপজেলার বাদুরা হাট সরকাির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আসমা বেগমের বাদুরা বাজারের বাসা থেকে একই উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের ছৈলাবুনিয়া গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল। স্থানীয় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের বখাটে ছেলে মোটরসাইকেল ড্রাইভার অহিদুল ইসলাম (২১) তার সঙ্গীদের সহায়তায় এ সময় ওই কিশোরীকে পথ থেকে তুলে অপহরণ করে।

ওই কিশোরীর বাড়ি বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার গাজীপুর বাজারে। সে ছোটবেলা থেকে ছৈলাবুনিয়া গ্রামে খালু বাবুল চন্দ্র সিকদারের বাড়িতে থাকে। সে বাদুরা হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।

বাবুল চন্দ্র সিকদারের স্ত্রী অর্থাৎ অপহৃতের মাসি অঞ্জু রানী অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় বখাটে অহিদুল ইসলাম দীর্ঘ দিন ধরে তার বোনের মেয়েকে অর্থাৎ ওই কিশোরীকে স্কুলে আসা যাওয়ার পে উত্ত্যক্ত করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। এনিয়ে অহিদুলের অভিভাবকদের সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে কয়েক ফা সালিশ বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয় নি। বরং উত্ত্যক্তের ঘটনা আরও রেড়েছে।

অঞ্জু রানীর অভিযোগ, ঘটনার পর পরই বিষয়টি তিনি লিখিত ভাবে থানা পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশ ওই অভিযোগ ঘটনার ১০ নি পর মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে। অপহরণের পর থেকে আসামিরা থানায় দেয়া অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য প্রায় প্রতিদিন তাকে হুমকি দিচ্ছে। তার ধারণা আসামিরা অপহৃতকে ধর্ষণ, নির্যাতন কিংবা অন্যত্র পাচার করে দিয়েছে।

মামলায় অহিদুল ইসলাম ছাড়াও তার বাবা বাদুরা বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খাঁ, মা পারুল বেগম, পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের মৃত নূরুল হকের ছেলে মোজাম্মেল হক, তার ছোট ভাই কামাল খাঁ ও বাদুরা বাজারের বাসিন্দা নুরুল হকের আরেক ছেলে মাহবুবুর খাকে আসামি করা হয়েছে। অপহরণ ঘটনার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অপহৃত স্কুল ছাত্রী উদ্ধার না হওয়ায় পরিবারটি মুষড়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ আক্তার মোর্শেদ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পরই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অপহৃতকে উদ্ধারে কয়েক ফা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আসামিরে দু’টি দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আসামিরা সকলেই পলাতক। তারপরেও অতিদ্রুত স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, থানায় মামলা হওয়ার পর থেকে আমরা একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু আসামিরা দ্রুত স্থান পরিবর্তন করায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আশা করিু’এক দিনের মধ্যে স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

বাদির পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকির সত্যতা স্বীকার করে তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেন, সবার আগে অপহৃতকে উদ্ধারে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এ বিষয়টি পরে দেখা হবে।

এদিকে অপহৃতের মা শেফালী রাণী কান্নায় মুষড়ে পড়ে বলেন, আমার মাইয়াডারে আপনারা আইন্না (এনে) দেন। মায় (মেয়ে) আমার কি অবস্থায় আছে আমি জানি না। আমার মেয়ে আমার কাছে না দিয়ে অহিদুলের বাড়ির লোকজন খালি হুমকি দিচ্ছে। আমি বিচার চাই।

মেয়ের মাসি অর্থাৎ মামলার বাদি অঞ্জু রানী অভিযোগ করেন, আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা ভয়ের মধ্যে আছি। আসামিরা যে কোন সময়ে আমাদেরও ক্ষতি করতে পারে।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৫, ২০১৯)