গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুরে রোগি সেজে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসককে (মেডিকেল অফিসার) উত্ত্যক্তের অভিযোগে রুবেল খান (২৫) নামে এক বখাটেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে নেত্রকোনা জেলা সদরের পারলা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্ত রুবেল উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের গড়পাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।

জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল রুবেল খান (২৫) হাঁটুর ব্যথা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই নারী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার জন্য আসেন। প্রয়োজনীয় ঔষুধের একটি ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন তিনি। পরদিন আবারও রুবেল তাঁর কাছে আসেন অন্য রোগ দিয়ে। আবারও প্রয়োজনীয় ঔষুধের একটি ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন তিনি। এর পর থেকে দুদিন পর পরই রুবেল তাঁর কাছে আসতে থাকে। তার কাছে অনুমতি না নিয়েই তার রুমে ঢুকে পড়তো রুবেল। এ সময়গুলো তাকে নানা ধরণের কথাবার্তা বলে উত্যক্ত করার চেষ্টা করতো।

এ ঘটনায় একদিন তিনি প্রতিবাদ করলে রুবেল তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে বেরিয়ে যায়। এমনকি তাকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা. মো. রবিউল ইসলামকে জানান। কিন্তু হাসপাতাল থেকে তাকে কোনো ধরণের সাহায্য করা হয়নি। বরং স্থানীয় ব্যক্তির ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

গত শনিবার গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিজ কক্ষে বসে খাবার খাওয়ার সময় রুবেল বিনাঅনুমতিতে তাঁর কক্ষে প্রবেশ করে। একটি গুড়ো দুধের প্যাকেট তার টেবিলে ছুঁড়ে ফেলে খেতে বলে। এ সময় তিনি চিৎকার শুরু করলে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী ছুঁটে সেখানে আসে। পরে রুবেল পালিয়ে যায়। বিষয়টি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি।

সোমবার তিনি হাসপাতাল থেকে ময়মনসিংহ শহরে নিজ বাসার উদ্দেশে রওয়ানা করেন। গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে যেতে রিকশায় উঠলে রুবেল তার পথ আঁকড়ে দাঁড়ায়। এ সময় রুবেল সিগারেট পান করছিল। এক পর্যায়ে রিকশায় চড়ে তার সঙ্গে বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এই চিকিৎসক তার সঙ্গে না যেতে চাইলে অন্য একটি রিকশা করে বাসস্ট্যান্ডে আসেন রুবেল।

বাসে ওঠার পরও চিকিৎসককে উত্যক্ত করতে থাকে রুবেল। প্রথমে পানি ও পরে কফি এনে তাকে খেতে জোর করে। কিন্তু তিনি খেতে না চাইলে তার মুখে চেপে ধরে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে রুবেলকে কিলঘুষি ও ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে নিচে নেমে পড়েন তিনি। পরে সেখান থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ফারহানা করিমের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। পরে ইউএনওর পরামর্শে গৌরীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই চিকিৎসক।

এ বিষয়ে ইউএনও ফারহানা করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই নারী চিকিৎসক উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে আমার বাসায় আসেন। পরে আমি তাকে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেই। আমিও থানায় নির্দেশ দিয়েছি যাতে পুলিশ রুবেল নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।

গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা. মো. রবিউল ইসলাম জানান, তিনি নারী চিকিৎসককে উত্ত্যক্তের ঘটনা জেনেছেন তিনদিন আগে। এর আগে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে রুবেলের বিরুদ্ধে নালিশ করেছেন। চেয়ারম্যান বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন।

এদিকে মামলা দায়েরের পর পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযানে বের হলে রুবেল আতœগোপনে চলে যায়। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গৌরীপুর থানার উপপরিদর্শক বিপ্লব সরকার ও রুহুল আমিনের নেতৃত্বে গৌরীপুর থানার পুলিশের একটি টিম রুবেলকে নেত্রকোনা জেলা সদরের পারলা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।

গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বখাটে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে কোর্টে প্রেরণ করার প্রস্তুতি চলছে।

(এসআইএম/এসপি/এপ্রিল ২৫, ২০১৯)