গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : উর্ধতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও শিক্ষক সঙ্কটের কারণে ময়মনসিংহের গৌরীপুর আর.কে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা চলছে। কখনো শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হয়, কখনো আবার হয় না। কখনো চতুর্থ ঘন্টার পর ছুটি হয়ে যায় বিদ্যালয়। কখনো আবার দু-তিন পিরিয়ডে পাঠদান করিয়ে ছুটির আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আটকে রাখা হয়। এছাড়াও আছে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব সহ নানা সমস্যা। ফলে পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিপর্যয়।

জানা গেছে, ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত গৌরীপুর আর.কে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতো। কিন্তু গত দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ের ফলাফল অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় চলে এসেছে। এরমধ্যে ২০১৭ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় বিদ্যালয় থেকে ৩৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পেলেও পরের বছর ২০১৮ সালে একই পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পায় মাত্র ২জন শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৬৮২জন শিক্ষাথী রয়েছে। এখানে প্রধান শিক্ষক সহ ১৮ জন শিক্ষক, ২জন উচ্চমান সহকারী ও ৬জন এমএলএসএস এর পদ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক, ভৌত বিজ্ঞানের ২জন, জীব বিজ্ঞানে ১জন, ইসলাম ধর্মে ১জন, হিন্দু ধর্মে ১জন সহকারী শিক্ষক, ১জন উচ্চমান সহকারী ও ৫জন এমএলএসএস এর পদ শূণ্য রয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সালের পর ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের চারজন সহকারি শিক্ষক এসএস সাজ্জাদ হোসেন, মিতা মুখার্জী, এ কে এম মশিউর রহমান ও মোঃ বদরুল আলম প্রেষণে ময়মনসিংহ ল্যাবরেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ে সংযুক্ত হন। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এসএম তাসফিকুল হায়দার এমএড প্রশিক্ষণের জন্য ছুটিতে আছেন।

সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ এপ্রিল বিদ্যালয়ের একমাত্র উচ্চমান সহকারি মোঃ কামরুজ্জামানও ময়মনসিংহ ল্যাবরেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রেষণে সংযুক্ত হয়েছেন। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষক সহ ১৩জন শিক্ষক দিয়ে চলেছে বিদ্যালয়ের পাঠদান।

এদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রেষণ বাতিলের দাবিতে ‘গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ’ ইতিমধ্যে অভিভাবকদের নিয়ে মানব বন্ধন ও গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম স্মারকলিপি গ্রহণের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি। দ্রুত এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিনে বিদ্যালয়ে ঘুরে দেখা যায় শ্রেণিকক্ষগুলো ফাকা। শিক্ষার্থীরা বাইরে ছুটাছুটি করছেন। ১৩ জন শিক্ষকের মধ্যে উপস্থিত আছেন মাত্র ১০ জন শিক্ষক। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিতে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ছুটিতে আছেন। আর অপর দুই শিক্ষকের মধ্যে একজন প্রশিক্ষণে ও আরেকজন ব্যক্তিগত কাজে ছুটি নিয়েছেন।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জোবায়িদ হাসান আপন বলেন, “আমাদের শিক্ষকরা প্রেষণে কারণে বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান হয়না। বিজ্ঞান বিভাগে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব থাকার কারণে এক শিক্ষকের পাঠদান অন্য শিক্ষক করাচ্ছেন। এতে আমাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা খুব টেনশনে আছি”।
অভিভাবক শফিকুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষক সঙ্কট ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে উপজেলা একমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে ছেলেকে ভর্তি করে দুশচিন্তায় আছি”।

গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিুবর রহমান ফকির বলেন, ৫ শিক্ষক প্রেষণে থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহালদশা হয়েছে। শিক্ষকদের প্রেষণ বাতিল ও বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে অভিভাবকরা মানববন্ধন করে ও মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। দ্রুত এই সমস্যা সমাধান না করা হলে আমরা অভিভাবকরা কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো”।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা বিজন চন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়টি আমরা স্থানীয় এমপি মহোদয় সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত সঙ্কট সমাধান হবে”।

(এসআইএম/এসপি/এপ্রিল ২৫, ২০১৯)