পাবনা প্রতিনিধি : পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের সংযোগ দেওয়ার আগেই উপড়ে পড়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। এতে হতে পারতো বড় দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে বসত বাড়ি, অফিস ও সীমানা প্রাচীর। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ঠিকমতো তদারকি না করা ও ঠিকাদারের গাফিলতি আর কাজের মান নিম্নমানের হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে দাবী করেছে এলাকাবাসী।

পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের নূরপুর পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিঃ পাবনা ১৩২/৩৩ কেভি গ্রীড উপকেন্দ্র থেকে গাছাপাড়া পর্যন্ত সুউচ্চ ১১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি তার টাঙানোসহ সম্পূর্ণ উপড়ে গেছে এছাড়া প্রায় সবকটি খুঁটি বাঁকা হয়ে আছে।

বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তড়িঘড়ি করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঠিকাদারের বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো ও তার টাঙানোয় কর্মরত শ্রমিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত লাইন ও বৈদ্যুতিক খুঁটি প্রতিস্থাপনের কাজ করছেন। গাছপাড়া ব্র্যাক টার্ক অফিস থেকে বালিয়া হালট আমজাদ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত ১১টি লাইন টাঙানোসহ বৈদ্যুতিক খুঁটি বসত বাড়ি, সীমানা প্রাচীর, শিশুদের স্কুল ও পুকুরের মধ্যে উপড়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ঠিকাদারের লোকজন মাটি খুঁজে কোনমতো খুঁটি বসানোর সাথে সাথে তার টাঙিয়ে দিয়েছে। শ্রমিকেরা স্থানীয়দের বলেছেন, খুঁটি বসিয়ে তার টাঙানো হলেই বাঁকা সোজা সেরে যাবে। খুঁটি পড়ার কোন সম্ভবনা নেই। কাজের মান নিম্নমানের, খুঁটির গোড়ায় মাটি না থাকায় এবং তারগুলো এক সাইড দিয়ে টাঙানোর কারনেই খুঁটিগুলো দ্রুত পড়ে গেছে বলে দাবী করছেন স্থানীয়রা। এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ কে এ ব্যাপারে আগে থেকে বলেও কোন লাভ হয় নাই।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঠিকাদার রফিক জানান, পাবনা শহরের নুরপুৃর থেকে টেবুনিয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ২শ’ বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো ও লাইন টাঙানোর কাজ করছেন তিনি। ইতোমধ্যে সবকটি খুঁটি বসানোর পর রোববার লাইন টাঙানো হয়েছে। আগামি জুনের ৩০ তারিখে ৩৩ কেভি লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

ঠিাকাদার রফিকের দাবী, পিডিবি কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে বসানো খুঁটির এক সাইডে সব তার টাঙানোর ফলে লোড বেশি হওয়ায় এবং রোববার সন্ধ্যার পর অতিমাত্রায় বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসে খুঁটিগুলো উপড়ে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাজের শুরু থেকেই অসহযোগিতা করে আসছেন। ফলে তাদের কারণে আমি আর্থিক ভাবে দারুন ক্ষতির সন্মুখিন হলাম।

বালিয়াহালট গোরস্তানের কাছে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিকের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ঠিকাদার যেভাবে কাজ করার জন্য বলেছেন, তার বাইরে যাওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। বিল যেহেতু ঠিকাদার দেন, সেহেতু ঠিকাদারের বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারবো না।

এ ব্যাপারে পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা ঠিকাদারের সাথে যোগসাজসে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে রাতের আঁধারে খুঁটি বসানোর কাজ করেছে। পিডিবির ১১ কেভি লাইনের পাশ দিয়ে পবিসের ৩৩ কেভি লাইন কখনও পাশাপাশি হতে পারেনা। এতে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের মারাত্বক ব্যাঘাত ঘটে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, ৫ ফিট দুরবর্তী তার টাঙানোর নিয়ম থাকলেও সেটা তারা লঙ্ঘন করে ১ ফুট করেছিল। যা বিপজ্জনক।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তাদের ৩৩ কেভি লাইনের কারণে শহর ও আশপাশে বেশ কিছু মিটারসহ ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির মূল্যবান জিনিষপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সঠিক ও নিরাপদ ভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য উভয় অফিসে একাধিক বার চিঠি আদান প্রদান ও বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু অনিয়মতান্ত্রিক ভাবেই পবিস কর্তৃপক্ষ এই কাজ করেছে। এর দায় ভার পুরোটাই তাদের।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাবনাস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২০ জুন পর্যন্ত। এম এস ট্রেডার্স ও বিদ্যুৎ প্রবাহ এ দুটি ঠিকাদার কোম্পানী কাজ করছে। চারটি সাব স্টেশনের জন্য এই লাইন টাঙানো হচ্ছে। আগামী মে মাসের মধ্যে এই বিদ্যুৎ লাইনে সংযোগ দেয়ার কথা রয়েছে। আমি তাদের বলেছে যেহেতু খুঁটিগুলো পড়ে যাচ্ছে। তাহলে আরেকটি খুঁটি দিয়ে ঠেকনা দিলে আর খুঁটিগুলো পড়বে না। আর বাঁকা খুঁটিগুলো সোজা করে দিতে বলা হয়েছে।

(পিএস/এসপি/এপ্রিল ২৬, ২০১৯)