বরিশাল প্রতিনিধি : যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করার অপরাধে প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে (৩০) বরিশাল জেলা জজ আদালতের সামনে থেকে অপহরণের পর গণধর্ষণের ঘটনায় অবশেষে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে কোতয়ালি মডেল থানায় ভিকটিম গৃহবধূ নিজেই বাদি হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন-গৃহবধূর স্বামী প্রবীর মিত্র, ননদ জামাই মানব চন্দ্র, গৌরাঙ্গ নাথ এবং অজ্ঞাতনামা আরও দুইজন। মামলার প্রধান আসামি প্রবীর মিত্র ঘটনার একদিন পর স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক ও নির্যাতনের আগের মামলার আসামি হিসেবে জেলহাজতে রয়েছে। অন্যান্য আসামিরা পালাতক রয়েছে।

বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) এর দায়িত্বে থাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এসআই এইচএম শাহিন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভিকটিমের অসুস্থতার কারনে মামলা দায়ের করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তাছাড়া ভিকটিমের মেডিক্যাল পরীক্ষা এবং তার রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এজাহার তৈরী করে তা কোতয়ালি মডেল থানায় প্রেরন করা হয়েছে। থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার মামলাটি রুজু করেছেন।

মামলার বরাত দিয়ে এসআই এইচএম শাহিন জানান, ২০১৩ সালে সামাজিকভাবে স্বরূপকাঠীর নেছারাবাদ উপজেলার কুড়িয়ানা আদাবাড়ি গ্রামের বিনেন্দ্র মিত্রর পুত্র প্রবীর মিত্রর সাথে গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া গ্রামের শারিরিক প্রতিবন্ধী (বর্তমান মামলার বাদি) যুবতীর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বর পক্ষের দাবি অনুযায়ী নগদ দুই লাখ টাকা, তিন ভরি স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল যৌতুক হিসেবে দেয়া হয়। বিয়ের এক বছর না যেতেই স্বামী প্রবীর মিত্র ও তার পরিবারের সদস্যরা গৃহবধূকে তার বাবার বাড়ি থেকে আরও এক লাখ টাকা এনে দিতে বলে। এতে অপরাগতা প্রকাশ করায় প্রায়ই শারিরিক প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে শারিরিক নির্যাতন করা হতো। পরবর্তীতে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা গৃহবধূকে ঘর থেকে বের করে দেয়।

এ ঘটনায় নির্যাতিতা গৃহবধূ বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গৃহবধূর শাশুরী আরতি মিত্র ও দেবর পার্থ মিত্রকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরন করেন থানা পুলিশ। এতে স্বামীসহ অন্যান্য আসামিরা ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে গত ১৬ এপ্রিল মামলার ধার্য তারিখে আদালতে হাজির হন গৃহবধূ। দুপুরে তিনি বাড়ি ফেরার পথে নগরীর পোর্ট রোডস্থ আবাসিক হোটেল চিল এর সামনে অপরিচিত এক ব্যক্তি তার পথরোধ করে। ওই ব্যক্তি কৌশলে মুখে রুমাল ধরে গৃহবধূকে অচেতন করে অপহরণ করে। পরে একটি পরিত্যাক্ত নির্জন ঘরের মধ্যে গৃহবধূর জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পান তার স্বামী প্রবীর মিত্র, ননদ জামাই মানব চন্দ্র, গৌরাঙ্গ নাথসহ আরো কয়েকজন ওই ঘরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামিরা মামলা দায়েরের খেসারতের কথা বলে গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এর ফলে দ্বিতীয়বারের মতো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। দ্বিতীয়বার নগরীর যেকোন একটি রাস্তায় গৃহবধূর জ্ঞান ফেরে। সেখান থেকে এক পথচারী ব্যক্তি পাশবিক নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালি মডেল থানার এসআই আরাফাত হাসান রহমান বলেন, ঘটনার একদিন পর গৃহবধূর স্বামী যৌতুক মামলায় আদালতে আত্মসমর্পন করার পর বিচারক তাকে জেলহাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন। তবে এজাহার নামধারী অপর দুই আসামি এখনও পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ২৬, ২০১৯