নিউজ ডেস্ক : জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, স্বপ্রণোদিতভাবে, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। দোষীদের বিচারের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদ দায় এড়াতে পারে না।

গত ২৩ এপ্রিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ‘সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।

রোহিঙ্গা সঙ্কটে সৃষ্ট যৌন সহিংসতার মতো অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়ার যে সংস্কৃতি বিশ্ব অবলোকন করে যাচ্ছে, সে প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে মোমেন বলেন, এ সকল অপরাধের সমাপ্তি ঘটানো না গেলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর এ অপরাধসমূহের দায় নির্ধারণ ও বিচার নিশ্চিতের মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব, যা তাদেরকে নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে উৎসাহিত করবে; কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি বাস্তবায়িত হয়নি।

এসব বিষয় উল্লেখ করে তিনি নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি প্রশ্ন রাখেন, আপনারা কি প্রত্যাশা করেন রোহিঙ্গারা বিশেষ করে অবর্ণনীয় যৌন সহিংসতার স্বীকার রোহিঙ্গা নারী ও বালিকারা ‘তাদের ওপর এ জাতীয় আর কোনো সহিংসতা হবে না’ মর্মে স্পষ্ট নিশ্চয়তা ছাড়া স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যাবে?

শুধু যুদ্ধের অস্ত্র ও কৌশল হিসেবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দ্বারা বাংলাদেশের মা-বোনেরা যে অবর্ণনীয় যৌন সহিংসতা ও নিপীড়নের স্বীকার হয়েছিলেন, সেই ভয়াল স্মৃতির কথা তুলে ধরেন মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, সেই একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের হিসাব অনুযায়ী, সহিংস যৌন নির্যাতনের ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ২০১৮ সালে প্রায় ৪ হাজার শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে, যাদের গ্রহণ করতে মায়েরা পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। কেন এমনটি ঘটছে, আমরা কি আন্দাজ করতে পারি? এসব শিশুদের স্বীকৃতি, ক্ষতিপূরণ এবং নিজ দেশ মিয়ানমারে ভালো ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই আমলে নেয়ার আহ্বান জানান স্থায়ী প্রতিনিধি।

যৌন নির্যাতন ও এর অপব্যবহার রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স পলিসি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে বাংলাদেশ যৌন নির্যাতন ও এর অপব্যবহার রোধে সচেতনতাসৃষ্টিসহ বাংলাদেশের সকল শান্তিরক্ষীদের জন্য পদায়নপূর্ব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন সহিংসতা ও বৈষম্যের অভিযোগসমূহ আমলে নিয়ে এর বিচার ও প্রতিকারে আমরা নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছি। ইউএন উইমেনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা’ বিষয়ে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ, মহাসচিবের যৌন সহিংসতা রোধবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ডেনিস মুখউইজি ও নাদিয়া মুরাদ এবং ব্যারিস্টার অমল ক্লুনে আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৬, ২০১৯