নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দা উপজেলায় বিএডিসির ব্রি-ধান-৬৩ জাতের ধান চাষ করে কৃষকরা সর্বশান্ত হয়েছেন। মাঠে মাঠে এই জাতের ধান দেখে পাকা ধানের ক্ষেত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে ধানের ভিতরে কোন চাউল নেই। মাঝড়া পোকা ও ব্লাষ্টের আক্রমনে প্রতিটি শীষে কেবলই চিটা। এক মুঠো ধান ঘরে তুলতে না পারার আশঙ্কায় দিশেহারা কৃষকরা। 

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার মৈনম ও কশব ইউনিয়নসহ আশ-পাশের বিস্তীর্ন এলাকার কৃষকরা চলতি বোরো মৌসুমে বিএডিসি থেকে বীজ সংগ্রহ করে তাদের জমিতে ব্রি-ধান ৬৩ জাতের ধান রোপন করেন। ধানের গাছ বেশ ভালোই হয়েছিল। দেখে মনে হয়েছিল ফলনও ভালোই হবে। কিন্তু যখন শীষ বের হতে থাকে তখন কৃষকদের চক্ষু ছানাবড়া। ধানের মধ্যে কোন দুধ নেই। পরবর্তীতে শুধুই চিটা। কোন ধানের মধ্যে চাউল নেই। প্রতিটি ধানের গাছে শীষে কেবল চিটা আর চিটা। একটি ধানের মধ্যে কোন চাল নেই। হাজার হাজার টাকা খরচ করে ধান উৎপাদন করে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। খরচের টাকা কোথা থেকে তুলবেন আর ছেলে মেয়ে নিয়ে সারা বছর কি খাবেন, এই দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই তাদের চোখে।

মান্দার মৈনম গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ধানের শীষে চিটা দেখে তারা বার বার কৃষি বিভাগের নিকট যোগাযোগ করে পরামর্শ চান। কৃষি বিভাগ বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কিন্তু কোন পরামর্শই কাজে আসেনি বলে জানান তিনি। এখন আমরা চোখে আঁধার দেখছি। কি করে সংসার চালাবো। বাকি দিনগুলো কিভাবে কাটাবো। বিএডিসি কেন আমাদের এই সর্বনাশ করলো?

কশব গ্রামের কৃষক দুলাল বলেন এই এলাকায় যারা বিএডিসি থেকে ব্রি-ধান ৬৩ জাতের ধান চাষ করেছেন তাদের সকলেরই একই অবস্থা। তারা সকলেই বিএডিসি নওগাঁ অফিস থেকেই বীজ সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁরাই কেবল ফসল হারিয়ে বর্তমানে সর্বশান্ত হয়েছেন। ধানই আমাদের একমাত্র সম্বল। এখন আমরা কি ভাবে সংসার চালাবো। সন্তানদের পড়ালেখার খরচ কিভাবে দিবো?

নওগাঁ বিএডিসির উপ-সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, এই প্রতিষ্ঠান কেবল বীজ বিক্রয় কেন্দ্র। বিভিন্ন উৎস থেকে বীজ সংগ্রহ করে তা সঠিকভাবে রক্ষাবেক্ষন এবং যথাযথ মান নিয়ন্ত্রনের পরই কেবল কৃষকপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে আসলে কি হয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষে জানা সম্ভব।

মান্দার মৈনম ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উৎসব কুমার হাজরা বলেন, কৃষকদের নিকট থেকে জানতে পেরে জমিতে সরেজমিন পরিদর্শন করে করনীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করেছি। আবহাওয়ার কারণে মাজরা পোকা এবং ব্লাষ্ট-এর অক্রমনে এমনটা হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মাহবুবার রহমান বলেন, মান্দা এলাকায় ধানের এই বিপর্যয়ের কথা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিকট থেকে অবগত হয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। তাঁদের মতে বর্তমানের আবহাওয়ায় ধানের এমন অবস্থা হওয়া কথা নয়। গাছ ভালো হয়েছে, এক্ষেত্রে পরাগায়নের বিভ্রাট হতে পারে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।

এই এলাকার কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। অনেকের ঘরেই একমুঠো ধানও উঠবেনা। এই ক্ষতি কাটিয়ে কৃষকরা কিভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন সে ব্যাপারে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতনমহল।

(বিএম/এসপি/এপ্রিল ২৬, ২০১৯)