মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তের মধ্যেই কোচিং নাম পরিবর্তন করে  অভিনব কায়দায় মদনে চলছে প্রাইভেট বাণিজ্য।  কিছুতেই থামছে না তাদের এই অনৈতিক কর্মকান্ড। সকাল- বিকাল শিক্ষকদের বাসার সামনে দেখলে মনে হয় কোন বিদ্যালয় ছুটি হয়েছে।

নীতিমালা তোয়াক্কা না করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজ বাসা-বাড়ি ও ঘর ভাড়া করে চালাচ্ছে তাদের এ কর্মকান্ড। এ কারণে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে গিয়ে অভিভাবকদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শ্রেণি কক্ষে স্যারেরা ঠিকমত পড়ান না। প্রতিটা বিষয়ের প্রাইভেট চালু হওয়ায় নিয়মিত বিদ্যালয়ের ক্লাসে যেতে আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি। ফলে বিদ্যালয়ের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, শ্রেণি কক্ষে ঠিকমত পড়ালে বাইরে প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজন হয় না। ভাল মন্দের যাচাই-বাচাই না করে ঢালাও ভাবে ক্লাসের সব শিক্ষার্থীদেরকে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় শিক্ষকরা নম্বর কম দেয় বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পৌরসদরের জাহাঙ্গীরপুর টি আমিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রাইভেট প্রবণতা বেশি। এ নিয়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির মাসিক সভায় প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এর প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, জাহাঙ্গীরপুর টি আমিন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক মোহাম্মদ বাবুল তালুকদারের প্রাইভেট বানিজ্য চলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসার পিছনে নিজ বাসায়। একই বিদ্যালয়ের গনিত শিক্ষক খালেদ ইবনে সিরাজ (সুমন) এর প্রাইভেট বাণিজ্য চলে বাড়িভাদেরা রোডের নিজ বাসায়। একই বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক আবু বকর মোহাম্মদ জাকারিয়া আল রাযীর প্রাইভেট বাণিজ্য চলে শ্যামলী রোডের ভাড়া বাসায়। একই বিদ্যালয়ের ইংরেজী শিক্ষক নূরুল আমীন আজাদের প্রাইভেট বাণিজ্য চলে নিজ বাসায়। বালালী বাঘমারা উচ্চ বিদ্যালযের সহকারি শিক্ষক কাজিম উদ্দিনের প্রাইভেট বানিজ্য চলে ফচিকা রোডের ভাড়া বাসায়।

চাহাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক আলমের প্রাইভেট বানিজ্য চলে জাহাঙ্গীরপুর নিজ বাসায়। মদন শহীদ স্মরনিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শ্যামল চন্দ্র দে প্রাইভেট বানিজ্য চলে বাড়িভাদেরা রোডের নিজ বাসায়। সুখারী দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারি জহিরুল ইসলামের কোচিং বাণিজ্য চলে মদন শহীদ স্মরণিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ তোতা মিয়ার দু-তলা ভবনে। বাগজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সাদেকুর রহমানের প্রাইভেট বাণিজ্য চলে তার নিজ বাড়ি পরশখিলা গ্রামের বাংলো ঘরে। এ ছাড়া একই কায়দায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ উপজেলা সদরসহ গ্রামাঞ্চলে জমজমাট প্রাইভেট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শ্রেণি ভেদে কমপক্ষে ৫শ থেকে সর্বোচ্চ ১হাজার ৫শ টাকাও আদায় করা হয়। এতে একজন শিক্ষক প্রতিদিন একাধিক ব্যাচ পড়িয়ে মাসে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন করছেন। পূর্বে এই প্রাইভেট বাণিজ্য শহরের নামি দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত থাকলেও এখন তা ক্যান্সার রোগের মত ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের স্কুল গুলোতেও।

কোচিং সেন্টাররের মালিক সুখারী দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারি জহিরুল ইসলাম জানান, আমার অজ্ঞিতায় আমি গণিত,ইংরেজি ও বিজ্ঞান পড়াই। তবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫শ থেকে ১হাজার টাকা আদায় করি। তবে কোনো পরিক্ষার ফি নেয়া হয় না।


বাগজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাদেকুর রহমান জানান, আমার বাড়িতে সকাল-বিকাল ৮ম শ্রেনি থেকে ১০ম শ্রেনির শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াই। তবে কোনো প্রাথমিক শিক্ষার্থী পড়াই না।

উক্ত কর্মকান্ডে জড়িত শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানোর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাদেরকে যদি কেহ নিষেধ করেন তবে আমরা প্রাইভেট পড়াব না।

জাহঙ্গীরপুর টি আমিন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা জেবুন্নাহার জানান, আমি শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়াতে নিষেধ করে, সরকারি বিধি মোতাবেক কাজ করতে বলেছি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার সুত্রধর জানান, স্কুল চলাকালীন সময় ব্যাতিত নিজ বিদ্যালয়ের দূর্বল শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে পারে তবে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়টি আমার জানা নেই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলাম জানান, প্রাইভেট এবং কোচিং সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ। যদি কেহ পড়ায় জানলে ব্যবস্থা নেব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ওয়ালীউল হাসান জানান, যে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রাইভেট বা কোচিং করছেন তাদের তালিকা সংগ্রহের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলে দিয়েছি। তালিকা পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এএমএ/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০১৯)