স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ আট বছর পর ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। তবে নিয়োগ কার্যক্রম নিয়ে নানা অভিযোগ তুলেছেন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা প্রার্থীরা।

জানা গেছে, গতকাল শনিবার রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নিয়োগ পরীক্ষায় মোট ১৫ জন প্রার্থীর অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষার মাঝামাঝি সময়ে আরও দুইজন প্রার্থী কেন্দ্র থেকে বের হয়ে চলে যান। একজনের লিখিত পরীক্ষা বাতিল করা হয়। মোট ১০ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষা পেরিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।

নিয়োগ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা প্রার্থী ও কলেজ শাখার সহকারী অধ্যাপক হাসিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ভিকারুননিসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ ব্যক্তিকেন্দ্রিক করা হয়েছে। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষককে নিয়োগ দিতে সাতটি প্রশ্ন ইংরেজিতে ও তিনটি প্রশ্ন বাংলায় উত্তর লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়। কাকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হবে নিয়োগ কমিটি আগেই কয়েক দফায় সভা করে চূড়ান্ত করেছেন। নিয়োগ পারীক্ষা শুধু ‘আইওয়াশ’ ছিল।

তিনি জানান, ফুল অধ্যাপক ব্যক্তিরা অধ্যক্ষ নিয়োগ পায়নি, ইংরেজি বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপককে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সে ইংরেজি বিভাগের বলেই সাতটি প্রশ্ন ইংরেজিতে উত্তর দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপরও অন্য প্রার্থীরা বেশি নম্বর পেলেও তাদের কমিয়ে দিয়ে রুমানা শাহীন শেফাকে নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এমন অভিযোগ খোদ এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নিয়োগে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকেরও।

তবে সকল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ভিকারুননিসার বর্তমান অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফেরদৌসি বেগম। তিনি রোববার জাগো নিউজকে বলেন, কাউকে কেন্দ্র করে অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করা হয়নি। আর এ পরীক্ষায় ইংরেজি সাহিত্য বা ভাষায় করা হয়নি। প্রার্থীদের ইংরেজিতে দক্ষতা রয়েছে কি না তা যাচাই করতে ইংরেজিতে সাতটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে বলা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ভিকারুননিসার মতো একটি বড় প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন চালাতে হলে ইংরেজি ও বাংলায় পর্যাপ্ত দক্ষতা প্রয়োজন, সে বিষয়টিকে মাথায় রেখে আমরা প্রশ্নপ্রণয়ন ও উত্তরপদ্ধতি নির্ধারণ করেছি। যারা ভালো করতে পারেনি তারাই নিয়োগ কার্যক্রম নিয়ে অভিযোগ তুলছেন। কাউকে বাতিল বা বিপদে ফেলতে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করা হয়নি। এর মাধ্যমে যোগ্যব্যক্তিকে অধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন অধ্যক্ষকে নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানান বর্তমান অধ্যক্ষ।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, নিয়োগ কার্যক্রমে একটি কমিটি ছিল, সেখানে সরকারি প্রতিনিধিও ছিল, তাই নিয়োগ কার্যক্রমে কোনো অনিয়ম হয়নি। কেউ এ নিয়োগ কার্যক্রম নিয়ে কোনো প্রশ্নও তোলেননি। অনেকে নিয়োগ পেতে আগেই নানা মহলের মাধ্যমে তদরির করেছিলেন, এমন একজন প্রার্থী নিয়োগ কার্যক্রম নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

তিনি বলেন, একটা গোষ্ঠী এ প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে রেখেছে। তারা বিভিন্ন বেশে এ প্রতিষ্ঠানকে ব্যবস্যা কেন্দ্রে পরিণত করেছে। এ সিন্ডিকেটে ভিকারুননিসার কিছুু শিক্ষকও জড়িত রয়েছেন। তবে তাদের এ অসৎ উদ্দেশ্য সফল হতে দেয়া হবে না।

বর্তমান গভর্নিং বডির মেধায় আগামী ৩ মে পর্যন্ত রয়েছে, এ সময়ের মধ্যে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানান গর্ভনিং বডির চেয়ারম্যান।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৮, ২০১৯)