রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পঞ্চম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক শহীদুল ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তাকে শাস্তিমূলক বদলীর দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার সন্ন্যাসীর চক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এক কর্মসুচি পালন করে।

মানববন্ধন কর্মসুচি চলাকালে বক্তব্য দেন নির্যাতিত স্কুল ছাত্রীর মা, স্কুল মাদারস ফোরামের সভাপতি আকলিমা পারভিন, সম্পাদক শাবানা খাতুন, ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ, মোক্তার গাজী, আব্দুল আলিম, নূর ইসলাম, শিক্ষার্থী সাবিনা খাতুন, তোহরা খাতুন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, গত ২৮ মার্চ সন্ন্যাসীর চক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উপজেলার পূর্বনলতা গ্রামের মৃত ইমান আলী মোল্যার ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩৯) পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর যৌন নিপীড়ন করেন। বিষয়টি ওই ছাত্রীর মা তাৎক্ষণিক ভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অবহিত করেন। যদিও ঘটনার পরের দিন থেকে ওই ছাত্রী আর স্কুলে যেতে পারছে না। ভীত হয়ে পড়ে তার কয়েকজন সহপাঠিও।

গত ১০ এপ্রিল উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বিদ্যালয়ে মা সমাবেশে যেয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পান এবং তিনি বিতর্কিত শিক্ষক শহিদুল ইসলামকে এক সপ্তাহের মধ্যে অন্যত্র শাস্তিমূলক বদলী করার আশ^াস দেন। ১৭ এপ্রিল ওই শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলে যেয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে শহীদুলকে বিভিন্ন স্থানে ট্রেনিং এ পাঠিয়ে কয়েকদিন ছুটি কাটাতে বলে রমজান মাসের পরে স্কুল খুললে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে ফন্দি করেন।

শহীদুলকে বাঁচাতে মাঠে নামেন ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ভুমিদস্যু রহিম পাড় নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে গত ২০ এপ্রিল ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও ১০ দিনে কোন ব্যবস্থা হয়নি শহীদুল ইসলামের। যদিও সোমবার দুবুরে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম ঘটনার তদন্তে সন্নাসীর চকে আসেন।

বক্তারা আরো বলেন, ইতিপূর্বে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির কারণে শহিদুল ইসলাম মৌতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাশিবাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলতা প্রাথমিক বিদ্যালয়, শুইলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সর্বশেষ সেন্ট্রাল সেহারা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আন্দোলনের মুখে ঝাঁটা ও জুতো পেটার মুখে বিতাড়িত হয়েছেন। অথচ সহকারি প্রাথমিক শিক্ষাক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর অনৈতিক সুবিধা নিয়ে শহীদুল ইসলামকে প্রশ্রয় দিয়ে স্কুলের পড়াশুনার ক্ষতি করতে চাইছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, যৌন হয়রানির ঘটনাটি সত্য নয়। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাকিম বলেন, যৌন হয়রানির শিকার এক ছাত্রীর মায়ের লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০১৯)