রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : গত ৮ এপ্রিল নিজ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীর শ্লিলতাহানীর অভিযোগে বৃহষ্পতিবার দুপুরে তৃতীয় দফায় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রকাশ্যে তদন্তকালে নির্যাতিত ওই ছাত্রী ও তার মা শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির বর্ণনা দিলেও কালিগঞ্জ উপজেলার সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা রহিম পাড় বিশেষ সুবিধা নিয়ে গত ২৫ দিনেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে দেননি।

কালিগঞ্জ উপজেলার সন্ন্যাসীর চক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীর মা জানান, গত ৮ এপ্রিল তার মেয়ের উপর যৌন নিপীড়নের ঘটনাটি ১০ এপ্রিল মা সমাবেশে ও ১৭ এপ্রিল বিশেষ কাজে স্কুলে এলে সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি তার কাছে ও মেয়ের কাছে জেনে শহীদুলকে শাস্তিমূলক বদলীর আশ্বাস দেন। তবে ওই শিক্ষকের নলতা বাজারের দোকানে তিনি মাঝে মাঝে সময় কাটান বলে সকলকে অবহিত করেন। এরপরও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি ২০ এপ্রিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।

এতে ক্ষুব্ধ হন রহিম পাড়সহ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্য। একপর্যায়ে শহীদুল মাষ্টার নিজেকে বাঁচাতে তার (ছাত্রীর মা) ভাই বাবুরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করনে। ২৮ এপ্রিল কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ঘটনার তদন্তে এলে তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। পুলিশকে ও ম্যানেজ করার চেষ্টা চালান শহীদুল মাষ্টার। প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসুচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়।

ওই ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, দূর্ণীতিবাজ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বৃহষ্পতিবার দুপুরে স্কুলে এলে সকলের উপস্থিতিতে তিনি ও তার মেয়ে শ্লীলতাহানির ঘটনায় শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এরপরও ওই কর্মকর্তা তাদেরকে একান্তে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অভিযোগ তুলে নিতে বলেন। এরপর কোন ঘটনা ঘটলে তিনি শহীদুলতে ক্ষমা করবেন না বলে প্রতিশ্রতি দেন। তদন্তের নামে মোস্তাফিজুর রহমান তার মেয়েকে যে সম্মানহানি করে চলেছেন পরবর্তী কোন ঘটনার জন্য তিনি দায়ী থাকবেন বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি। প্রতিবাদ, মানববন্ধন করেও কোন ব্যবস্থা গৃহীত না হলে তিনি শেষ পর্যন্ত শহীদুলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে ফেনীর সোনাগাজীতে নিহত নুসরাত জাহান রাফীর দৃষ্টান্ত রাখবেন।

নির্যাতিত মেয়েটির মামা বাবুরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, বোঝেন তো--- “একদিকে ভাগনী অপর দিকে সহকর্মী হাতে পায়ে ধরছে আমিই পড়েছি বেকায়দায়”। শাস্তি আমিও তো চাই।
স্কুল মাদারস ফোরামের সভাপতি আকলিমা পারভিন, সম্পাদক শাবানা খাতুন, ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ, মোক্তার গাজী, আব্দুল আলিম, নূর ইসলাম, শিক্ষার্থী সাবিনা খাতুন, তোহরা খাতুনসহ কয়েকজন জানান, ইতিপূর্বে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির কারণে শহিদুল ইসলাম মৌতলা, কাশিবাটি, কাজলা, নলতা, শুইলপুর, সর্বশেষ সেন্ট্রাল সেহারা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আন্দোলনের মুখে ঝাঁটা ও জুতো পেটার মুখে বিতাড়িত হন।ইতিপূর্বে কোন ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় এখানে এসেও তিনি পূর্বের অপকর্মী করার লোভ সামলাতে পারেননি।

তাছাড়া তাকে বাঁচাতে পেয়ে গেছেন পার্শ্ববর্তী উপজেলা দেবহাটার শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা রহিম পাড়কে। ইজ্জত বাঁচাতে শহীদুল মাষ্টার ইতিমধ্যেই বিগত ২৫ দিনে ৬০ হাজারেরও বেশি টাকা খরচের পাশাপাশি বড় ভাইকে সাংবাদিকদের দ্বারে দ্বারে পাঠাচ্চেন। ঢাকার ভিকুরুন্নেছা স্কুলের শিক্ষক ধর্ষক পরিমল জয়ধরের সহকর্মী হিসেবে শহীদুল ইসলামের নাম সকলের মুখে মুখে। সন্ন্যাসীর চক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার জন্য মোস্তাফিজুর ও রহিম পাড়কে দায়ী করেন তারা।

শিক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, অহেতুক তার সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করছে একটি মহল। তিনি ঘটনা ধামাচাপা দিতে কোন টাকা খরচ বা কাউকে প্রভাবিত করার কথা অস্বীকার করেন।

জানতে চাইলে কালিগঞ্জ সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৃহষ্পতিবার তদন্তে ওই স্কুল ছাত্রী শ্লীলতাহানির ঘটনা তুলে ধরেন। ঘটনার বিচার চান ওই মেয়ের মা। অথচ বিদ্যালয় বহির্ভুত রহিম পাড় ও কয়েকজন বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করায় তিনি সমস্যায় পড়েছেন। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপাজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম বলেন, মোস্তাফিজুরের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/মে ০৩, ২০১৯)