স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা : নীলফামারীর ডিমলায় সোনালী ব্যাংক ডিমলা শাখায় সদ্য যোগদানকৃত সিনিয়র কর্মকর্তা প্রেমিক রমেন চন্দ্র রায়ের সাথে বিয়ের দাবিতে অবস্থানের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নাটকীয় মিথ্যে অপহরন মামলা দিয়ে নিজেই বিপদে পড়েছেন সোনালী ব্যাংক ডিমলা শাখার ব্যবস্থাপক শরিফ হাসান।

তিনি ছাত্রীটির বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করে উল্টো ফেঁসে যেতে পারেন বলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মিমাংসার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন। শরিফ হাসানের লিখিত অভিযোগে পুলিশ ওই অনার্স পড়ুয়া ছাত্রীটিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে আদালতের বিচারক মেয়েটির জবানবন্দী ও প্রেমের সম্পর্কের উপযুক্ত প্রমানাদী পেয়ে তার জামিন মঞ্জুর করেন। ছাত্রীটি জামিন পেয়ে তাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অপরাধে মামলাটির বাদী শরিফ হাসানের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে চাওয়ায় আপোষ-মিমাংশার জন্য দৌড়-ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা শরিফ হাসান।তিনি এখন অপর ব্যাংক কর্মকর্তা প্রেমিক রমেন চন্দ্রকে একদিকে অনুরোধ করেছেন ছাত্রীটির পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে অন্যদিকে নিজেও ছাত্রীটির পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে।

সোনালী ব্যাংক ডিমলা শাখার চাকরিরত এক আনসার সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, বৃহস্পতিবার(২রা মে)খুব সকালে ম্যানেজার স্যার আমাকে নিয়ে নীলফামারী আদালত প্রাঙ্গনে যান।আমি প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরে দেখি সেখানে একে একে রমেন স্যার সহ তার পরিবারের লোকেরা ওই ছাত্রীটি(বিথী)সহ তার পরিবারের লোকেরা, মামলার অপর দুই নামীয় আসামী সহ সকলে মিলে উকিলের মাধ্যমে আপোষ-মিমাংসার কাগজপত্র প্রস্তুত করতে থাকেন। কিন্তু কিছু ত্রুটির কারনে সেদিন তা সম্ভব হয়নি।তবে অচিরেই আপোষ-মিমাংসা হবে বলে তাদের আলোচনায় আমি অনুমান করেছি।

নীলফামারী জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি ও জজ আদালতের জিপি আলিমুদ্দিন বসুনিয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, বিয়ের দাবিতে অবস্থান নেয়া ছাত্রীকে অপহরন মামলায় ফাঁসানোর ঘটনায় ছাত্রীটি আইনের আশ্রয় নিলে এ ঘটনায় ডিমলা সোনালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক ও ছাত্রীটির বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলার বাদী,ব্যাংক শাখাটির সিনিয়র কর্মকর্তা ও প্রেমিক রমেন চন্দ্র ,মামলাটি করতে অতিউৎসাহিত করা অফিসার(ক্যাশ)রবিউল ইসলামসহ জড়িতরা নিশ্চিত ফেঁসে যাবেন।

মিথ্যে মামলায় হয়রানীর শিকার ছাত্রী বিথী রানী বলেন,রমেনের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে তাই তার ইচ্ছাতেই আমি ও সে সেইদিন ডোমারের এক আত্মীয়র বাড়িতে গিয়েছিলাম।সেখানে যাওয়ার অল্পকিছুক্ষন পরেই জানতে পারি আমি নাকি রমেনকে অপহরন করেছি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আমাকে খুজছে তাই রমেনসহ আমি ডিমলায় ফিরে এসে সোনালী ব্যাংকেই বিয়ের দাবিতে অবস্থান নিতে বাধ্য হই।

ছাত্রীটি বলেন,মিথ্যে অপহরন মামলায় ১০ লাখ টাকা মুক্তিপনের যে অভিযোগ করা হয়েছে সে ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক কর্তপক্ষ সহ যে কেউ যদি কল রেকর্ড বা অন্যকোনো উপযুক্ত প্রমান দিতে পারেন তবে আমি যেকোনো ধরনের শাস্তি মাথা পেতে মেনে নিতে রাজি আছি। যাকে অপহরন করার অভিযোগ উঠলো সে আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে অপারগতা প্রকাশ করলেন আর ব্যাংক ম্যানেজার আমার বিরুদ্ধে মামলা কষে দিলেন!এখন আমি যখন আইনের আশ্রয় নিতে চাচ্ছি তখন তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।আমার বাবা-মা খুব সহজ সরল মানুষ তাই তাদের অনুরোধেই আমি এখনো নিরব রয়েছি।

এদিকে নাটকীয় মণগড়া মিথ্যে অপহরন মামলায় ফাঁসানোর ঘটনায় জড়িত সোনালী ব্যাংক ডিমলা শাখার ব্যবস্থাপক শরিফ হাসান ও কর্মকর্তা(ক্যাশ) রবিউল ইসলামসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।

কি ঘটেছিলো সেইদিন: নীলফামারী জেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোপা ডাঙ্গা গ্রামের ভদ্র নারায়ন রায়ের ছেলে ও সোনালী ব্যাংক ডিমলা শাখা সিনিয়র কর্মকর্তা রমেন চন্দ্র রায়(২৮) এর সাথে তার কাকার বড় শ্যালক জেলার ডোমার উপজেলার সদরের কলেজ পাড়ার ভবেন রায়ের মেয়ে ও অনার্স পড়–য়া ছাত্রী বিথী রানী(২০)এর দীর্ঘ বছর থেকে গভীর প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল।কিন্তু অর্থ লোভি প্রেমিক রমেন কিছু দিন আগে সোনালী ব্যাংকে সিনিয়র কর্মকর্তা পদে চাকরি পেয়ে বিথীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে গোপনে অন্যত্রে মোটা অংকের যৌতুকের বিনিময়ে নিজের বিয়ে ঠিক করেন।

এমন খবরে গত সোমবার দুপুরে ওই ছাত্রীটি প্রেমিক রমেন চন্দ্রের কর্মস্থল এলাকা ডিমলায় এসে প্রেমিকের আত্মসম্মানের কথা ভেবে ব্যাংকে না গিয়ে লোক মারফত প্রেমিক রমেনকে ডেকে এনে দুজনে ডোমারে এক আত্মীয়র বাড়িতে যান।এমন সময়ে ডিমলা সোনালী ব্যাংক শাখার কর্মকর্তা (ক্যাশ)রবিউল ইসলামের যোগসাজসে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপক শরিফ হাসান ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষ তাদের ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তাকে অপহরন করা হয়েছে বলে অবগত করেন।এবং ডিমলা থানা একটি সাধারন ডায়েরি(জিডি)করেন।

পরে ডিমলা থানা পুলিশের প্রচেষ্টায় ওই প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনেই বিকেলে সোনালী ব্যাংক ডিমলা শাখায় ফিরে এসে সেখানেই ছাত্রীটি বিয়ের দাবিতে অবস্থান নেন।

বিয়ের দাবিতে অবস্থান নেয়া ছাত্রীটি সেই সময়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন,রমনের সাথে আমার দীর্ঘ বছরের গভীর প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে।সে চাকরি পাবার পর থেকেই আমাকে এড়িয়ে চলছেন।আমাদের দীর্ঘ বছরের প্রেমের সম্পর্কের অনেক প্রমান দুজনের কাছেই রয়েছে।তাই রমেন আমাকে বিয়ে না করলে আমার আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবেনা।এবং আমার কিছু হলে যারা আমাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন রমেন সহ তারা সকলেই এর জন্য দায়ি থাকবেন।

ছাত্রীটি সেইদিন আরো বলেন, আমি ডিমলায় এসে রমেনকে লোক মারফত ডেকে নিয়ে দুজনের ইচ্ছেতেই ডোমারে গেলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক শরিফ হাসান ও ক্যাশিয়ার রবিউল ইসলাম আমাকে অপহরনকারী হিসেবে মিথ্যে অপবাদ দেন।কেউ কাওকে অপহরন করলে তাকে নিয়েই কি আবারও ফিরে আসেন?রমেন ও আমি যতক্ষন সময় এক সাথে ছিলাম ততক্ষন রমেনের ফোনটিও চালু ছিল। তাকে অপহরন করা হলেতো তার ফোনটি বন্ধ থাকত।

আর রমনকে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়নি, রমেন আমাকে দেখা মাত্রই অবাক হয়ে অনুরোধ করে জানায় যে, তার কর্মস্থল এলাকায় প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে তার সম্মান ও চাকরির ক্ষতি হতে পারে,তাই দুজনের সম্মতিতে আমরা ডোমারে এক আত্মীয়র বাড়িতে যাই।সেখানে যাবার অল্পকিছুক্ষনের মধ্যে জানতে পারি রমেনকে নাকি আমি অপহরন করেছি এমন খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।সেই সংবাদ পেয়ে আমরা দুজনে ব্যাংকে ফিরে এসে সেখানেই আমি বিয়ের দাবিতে অবস্থান নিতে বাধ্য হই।দিনে দুপুরে শহরের ভিতর থেকে অপহরনের এই নাটকীয় ঘটনা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়।তাছাড়া আপনারা (সাংবাদিরা)রমেনকেই জিজ্ঞেস করেন তাকে অপহরন করা হয়েছে নাকি সেই ভালো বলতে পারবেন।

আমি শুধু তার কাছে বিয়ের দাবি করেছি মাত্র। অভিযুক্ত প্রেমিক ও ব্যাংক কর্মকর্তা রমেনের কাছে অপহরনের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি! এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা ওই প্রেমিক-প্রেমিকার ছবি তুলতে গেলে ও তাদের কাছ থেকে আরো কিছু তথ্য চাইলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসার ভয়ে সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে তাদের ব্যাংক থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেন ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক শরিফ হাসান ও কর্মকর্তা(ক্যাশ)রবিউল ইসলাম।

পরে ব্যাংক কর্মকর্তা প্রেমিক রমেন মামলার বাদী হতে অপারগতা প্রকাশ করলে ব্যাংকটির ডিমলা শাখা ব্যবস্থাপক শরিফ হাসান বাদী হয়ে ছাত্রীটি সহ ৩জন এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাত ৪/৫জনকে আসামী করে মামলা নং-২৪,তারিখ-২৯/৪/২০১৯ইং দায়ের করলে পুলিশ ছাত্রীটিকে গ্রেফতার করেন।পরেরদিন মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ ছাত্রীটিকে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক ওইদিন বিকেলে ছাত্রীটির জামিন মঞ্জুর করেন ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের এজিএম আব্দুর সুলতান বলেন,ঘটনাটি ডিমলা শাখা ব্যবস্থাপক আমাদের যেভাবে অবগত করেছেন আমরা তাই জেনেছি।যদি ঘটনাটি মিথ্যে হয়ে থাকে তবে ছাত্রীটি লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা খতিয়ে দেখব।আর সোনালী ব্যাংকের যে কেউ সাংবাদিকদের সাথে তো দুরের কথা কোনো মানুষের সাথেই খারাপ আচরন করার কথা নয়।এমনটি হয়ে থাকলে আমি বিষয়টি বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।

ডিমলা থানার ওসি মফিজ উদ্দিন শেখ বলেন,ব্যাংক কর্মকর্তা অপহরনের লিখিত অভিযোগে আসামী ওই ছাত্রীটিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

তবে সোনালী ব্যাংক ডিমলা শাখার ব্যবস্থাপক শরিফ হাসানের মন্তব্যের জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তা সম্ভব হয়নি।

(এমআইএস/এসপি/মে ০৫, ২০১৯)