রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : চলতি দায়িত্বে থাকা মাদ্রাসা সুপারকে তুলে এনে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুপস্থিত হত্যা ও নাশকতাসহ ১২টি মামলার আসামী আব্দুল কাদের হেলালীর সাক্ষর করানো ও নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাগজে জবানবন্দি হিসেবে লিখিয়ে নিয়ে তাতে সাক্ষর করতে বাধ্য করানোর অভিযোগে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদীসহ আটজনের বিরুদ্বে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কালিগঞ্জের দারুল উলুম  চৌমুহুনী ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বাদি হয়ে সাতক্ষীরা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক হুমায়ুন কবীর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেসটিগেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অন্য আসামীরা হলেন, দারুল উলুম চৌমুহুনী ফাজিল মাদ্রাসার বহুল আলোচিত অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের হেলালী, বিষ্ণুপুর ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম, শ্রীরামপুরের রফিকুল ইসলাম, একই গ্রামের শিমুল, মুকুন্দ মধুসুধনপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম, কুলিয়া দুর্গাপুর গ্রামের সাজু, বন্দকাটি গ্রামের রবিউল ইসলাম।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১২ সালে কালিগঞ্জের ফতেপুর গ্রামের শিক্ষিকা মিতা রানী মণ্ডল ও লক্ষীপদ মণ্ডলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম আলী হত্যাসহ ১২টি নাশকতার মামলার আসামী দারুল উলুম চৌমুহুনী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের হেলালী। এসবের মধ্যে অধিকাংশ মামলায় জেল খেটেছেন তিনি। ২০১২ সালে ফতেপুরের সহিংসতার মামলায় জেলখানায় যাওয়ার পর পরিচালনা পরিষদ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাকে কর্তৃপক্ষ যোগদানের চিঠি দিলেও তিনি নাশকতা মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মাদ্রাসায় আসেননি। গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলামকে সাথে নিয়ে তিনি মাদ্রাসায় এসে অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করলে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার নির্দেশে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন মাদ্রাসার চলতি দায়িত্বে থাকা অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান।

মামলার বিবরণে আরো জানা যায়, রমজানের ছুটি থাকলেও রোববার অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের বাঁশতলা বাজারের কাপড়ের দোকানে বসে ছিলেন। দুপুর একটার দিকে আসামী সিরাজুল ও রবিউলসহ কয়েকজ মনিরুজ্জামানকে ধরে নিয়ে মাদ্রাসায় এনে পিস্তল দিয়ে গুলি করার ভয় দেখিয়ে তাকে অফিস ও আলমারির তালা খুলতে বাধ্য করেন। এরপর আসামী সাঈদ মেহেদীর নির্দেশে শিক্ষকদের হাজিরা খাতা ও রেজুলেশন খাতা বের করানো হয়। এ সময় সাঈদ মেহেদীর নির্দেশে মার্চ ও এপ্রিল মাসে লাল কালি দিয়ে অনুপস্থিত লেখার উপর হেলালী নিজের সাক্ষর করেন। সাঈদ মেহেদী রেজুলেশন খাতার ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।

পরে সাঈদ মেহেদীর বলা মতে কয়েকটি সাদা কাগজে মনিরুজ্জামানকে লিখতে বাধ্য করা হয়। সাক্ষর করিয়ে ছিল মারিয়ে নেওয়া হয় কয়েকটি সাদা কাগজে। ওই কাগজপত্র রেখে দেন হেলালী। চলে যাওয়ার আগে অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামী ও সাংসদ জগলুল হায়দারের তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়েরকৃত মামলার আসামী সাঈদ মেহেদী বলেন যে, এ মাদ্রাসা তার নির্দেশেই চলবে। হেলালী আগে জামায়ত করতো এখন আর করবে না। খবর পেয়ে পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নুরুল হক ছুঁটে এসে প্রতিবাদ করায় তাকেও জীবননাশের হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা বিচারিক আদালতের মুখ্য পেশকার নুরুল ইসলাম শোভন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে সাঈদ মেহেদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আব্দুল কাদের হেলালী বলেন, দীর্ঘদিন তিনি অফিসে আসেননি এটা ঠিক। তবে নিজের অধিকার বুঝে নিতে উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী,ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ও সাজু রোববার মাদ্রাসায় এসে যেভাবে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করতে সহযোগিতা করলেন তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করেন।

(আরকেপি/এসপি/মে ০৬, ২০১৯)