মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের শিবচর পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খানের আবাসিক হোটেল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ইন্নি আক্তার (১৫) নামে ৯ম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

রবিবার রাত ৯ টার দিকে পৌর মার্কেটের উৎসব একাত্তর চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড আবাসিক হোটেলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে শিবচর থানার পুলিশ।

নিহতের মায়ের দাবি, প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় ইন্নিকে অপহরণ করে রুবেল খান নামে এক বখাটে। পরে তাকে ওই হোটেল নিয়ে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে রুবেলসহ তিন জন। পুলিশের ধারণা একাধিকবার ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষণে ওই স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। হোটেলের কক্ষ থেকে একাধিক যৌন উত্তেজক ওষুধ পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানায়।

ইন্নি আক্তার শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়নের মুন্সিকান্দি এলাকার মৃত ইলিয়াস মৃধার মেয়ে এবং শিবচর শেখ ফজিলাতুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। তার মা শিবচর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের কর্মচারী হিসেবে কাজ করায় শিবচর পৌরসভার স্বাস্থ্য কলোনী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ইন্নি তার মায়ের সাথে বসবাস করতো।

রবিবার রাতেই স্কুলছাত্রীর মা ডলি আক্তার বাদী হয়ে তিন জনকে আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেছেন। এর আগে রবিবার রাত ১০টার দিকে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকা থেকে অভিযুক্ত রুবেল খান (২৩)কে গ্রেফতার করে পুলিশ। রুবেল শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের মুন্নচরকান্দি এলাকার মৃত তোতা খানের ছেলে। এ ঘটনার পর ওই হোটেল সিলগালা করে দেয়া হয়। ধর্ষণের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে হোটলের ব্যবস্থাপক রোনাল্ড সরকার ও রেস্টুরেন্টের কর্মী মো. খায়রুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মামলার এজাহার ও নিহতের পরিবার জানায়, রবিবার দুপুর ২টার দিকে ওই হোটেলের তৃতীয় তলার ৩০৫ নং কক্ষ ১ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে ভাড়া নেয় রুবেল। পরে সেখানে স্কুলছাত্রী ইন্নিকে এনে একাধিকবার ধর্ষণ করে রুবেল। এরপর রুবেল কৌশলে চলে গেলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আসাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক রোনাল্ড ও রেস্টুরেন্টের কর্মী খায়রুল।

এক পর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ইন্নির মারা গেলে তারাও কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে ওই হোটেলের এক কর্মচারী কক্ষের দরজা খোলা অবস্থায় ইন্নির মরদেহ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। পরে হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে রুবেলকে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট থেকে গ্রেফতার করা হয়। রাতেই পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে বাকি দুজনকেও গ্রেফতার করে।

নিহত ইন্নির মা ডলি আক্তার বলেন, ‘রোজ দুপুরের পরে আমার মেয়ে স্কুলের পাশে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। রবিবার সন্ধা হয়ে গেছে দেখি ইন্নির বান্ধবীদের সাথে কথা বলি। ওরা জানায় ইন্নিকে রুবেল নামে এক ছেলে বাইকে তুলে কোথায় যেন নিয়ে গেছে। সন্ধ্যা ৬টা বেজে গেলেও ইন্নি বাড়িতে না ফিরলে আমি আশেপাশে খোঁজাখুজি করি। পরে খবর পাই আমার মেয়ে হোটেলে মরে পড়ে আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার স্বামী ১২ বছর আগে মারা গেছে। এক ছেলে আর একটাই মেয়ে ছিল আমার সব। মেয়েটারে যারা গণধর্ষণ শেষে মেরে ফেললো আমি তাদের ফাঁসি চাই।’

গ্রেফতারের পরে মূল অভিযুক্ত রুবেল খান বলেন, ‘দুমাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক থাকায় ইন্নিকে তার ইচ্ছেতেই আমি হোটেলে নিয়ে যাই। পরে ধর্ষণ শেষে রক্ত দেখে আমি ভয় পাই। পরে ওখান থেকে পালিয়ে চলে আসি।’

হোটলের ব্যবস্থাপক রোনাল্ড সরকার জানায়, ‘শিবচর পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খানসহ এই হোটেলের মালিক রয়েছে ১৬ জন। তাদের নির্দেশেই আমরা স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও অবৈধ ভাবে হোটেল ভাড়া দিতাম। এখানে আমাদের কি দোষ? তবে ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের কথা তিনি অস্বীকার করেন।’

হোটেলের ব্যবস্থপনা পরিচালক পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, ‘হোটেল আমাদের একটি কোম্পানী। এখানে ৪১ জন শেয়ার আছে। নিয়ম অনুসারে হোটেল ভাড়া দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। যা হোটেলের ম্যানেজার দেখাশুনা করে। আমরা বছরে একবার হিসাব নেই। তবে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের ভাড়া দেয়ার বিষয় ম্যানেজার জানে।’

সোমবার দুপুর ২টায় মাদারীপুর সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অখিল সরকার বলেন, ‘আমরা এখনো ওই স্কুলছাত্রীর ময়না তদন্তের প্রতিবেদন করিনি। আমরা আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ময়না তদন্ত শেষে প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠানো হবে।’

সোমবার বেলা ১২টার দিকে মাদারীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বলেন, ‘নবম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রী ইন্নিকে একাধিকবার ধর্ষণের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। আসামিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। এছাড়াও এ ঘটনায় আরো যারা জড়িত তাদের কোন ভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। জোড়ালো ভাবে এই ঘটনার তদন্ত চলছে। এমনকি হোটেল মালিকদের যদি গাফিলতি থাকে তবে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

(এএসএ/এসপি/মে ০৬, ২০১৯)