পিরোজপুর প্রতিনিধি : পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৩শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি পুকুর এখন ভূমিদস্যুদের কবলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকার দলীয় প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা পুকুরটি ভরাট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্দেশে এই হীন কাজে লিপ্ত হয়েছেন।

এলাকাবাসীরা জানান, প্রায় ৩শ বছর ধরে তারা ওই পুকুরটির পবিত্রতা রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এমনকি কেউ গোসল বা ধোয়ার কাজ পর্যন্ত করতেন না। না না রোগসহ প্রসূতি মায়েদের বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভের জন্য ভক্তি সহকারে মানুষ ওই পুকুরের পানি পান করে সুস্থতা লাভ করায় পুকুরটি সনাতন ধর্মাবলম্বি মানুষের কাছে তীর্থস্থানে পরিণত হয়। তাছাড়া পুকুরটির উত্তর পাড়ে রয়েছে একটি জামে মসজিদ। ওই মসজিদের মুসল্লিরা পুকুরের ঘাট থেকে ওযু করেন। কিন্তু সরকার দলীয় প্রভাবশালী একটি মহল ঐতিহ্যবাহী এ পুকুরটি ভরাট করে ভিটি তৈরি করে দোকানঘর বরাদ্ধ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে তারা ওই পুকুরের জায়গায় দোকানের ভিটি বরাদ্দের নামে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এতে করে ৩শ’ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিলিন হতে চলছে। পুকুরটি এভাবে বিলুপ্ত হওয়ার ঘটনা শুনে এলাকাবাসীর মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, বৃটিশ আমলে পিরোজপুরের রায়েরকাঠীর জমিদার রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী জনসাধারণের নিরাপদ পানির সুবিধার্থে ৮২ শতক জমির উপর পুকুরটি খনন করেন। তখন থেকেই স্থানীয়রা ও দূরদুরান্ত থেকে জনসাধারণ ওই পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করতেন। স্থানীয় জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা প্রফুল্ল কুমার মালি (৮৪) বলেন, পুকুরটি আনুমানিক ৩শ’ বছরের পুরানো। আমি ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি প্রতিদিন এই পুকুর থেকে শত-শত নারী-পুরুষ পানি সংগ্রহ করতেন। পুকুরের পবিত্রতা রক্ষার জন্য কেউ গোসল বা ধোয়ার কাজ করতেন না। কলেরা, ডায়েরিয়া, আমাশয়, জন্ডিসসহ প্রসুতি মায়েদের বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভের জন্য ভক্তি সহকারে মানুষ ওই পুকুরের পানি পান করতেন।
কালীবাড়ীর এ ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি জনস্বার্থে রায়েরকাঠীর জমিদাররা খনন করলেও দেশ বিভাগের পরে এটি জেলা পরিষদের মালিকানায় চলে যায়। পরবর্তী সময়ে প্রতিবছর জেলা পরিষদ পুকুরটি মাছ চাষের জন্য লিজ দিয়ে অনেক টাকা রাজস্ব আয় করত। কিন্তু বর্তমানে প্রভাবশালী একটি মহল পুকুরটি ভরাট করে ভিটি বরাদ্দের পায়তারা করছে। এতে করে ৩শ’ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিলিন হতে চলছে। পুকুরটি এভাবে বিলুপ্ত হওয়ার ঘটনা শুনে এলাকাবাসীর মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু তারা প্রভাবশালী মহলের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে কালিবাড়ী বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার হাওলাদার বলেন, পুকুরটির উত্তর পাড়ে রয়েছে একটি জামে মসজিদ। ওই মসজিদের মুসল্লিরা পুকুরের ঘাট থেকে ওযু করেন। পুকুরটি ভরাট হয়ে গেলে মুসল্লীদের ওযু করতে অসুবিধা হবে।
জমিদারদের রেখে যাওয়া ব্রাক্ষ্মণ পরিবারের সদস্য লক্ষ্মী নারায়ণ চক্রবর্তী জানান, রায়েরকাঠীর জমিদাররা এখানে জনস্বার্থে দুর্গা ও কালিমন্দির স্থাপন এবং পুকুর খনন করেন। সেই থেকে আমরা এগুলো দেখাশুনা করে আসছি। পুকুর ভরাট হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি পুকুর নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, সরকার দলীয় প্রভাবশালী একটি মহল ইতোমধ্যে ওই পুকুরের জায়গায় দোকানের ভিটি বরাদ্দের নামে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আকরাম হোসেন খান জানান, পুকুরটি ভরাট করা হবে না। তবে পুকুরের চার পাশের পাড়সহ ভিতরের কিছু অংশে দোকানের জন্য ভিটি হিসেবে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।
(এসএ/এএস/এপ্রিল ১৬, ২০১৪)