শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : পদ্মা সেতু চালুর আগেই মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যুক্ত করা হচ্ছে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেন ও অন্যান্য সরঞ্জাম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে মোংলা বন্দরের জন্য ৪৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে অত্যাবশকীয় যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম সংগ্রহ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। মোংলা বন্দরের জন্য অনুমোদিত এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সাতটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল হারবার ও মাল্টিপারপাস ক্রেন, উচ্চক্ষমতার ফর্কলিফট, রিচ ট্রাক, লো-মাস্ট ফর্ক লিফট ট্রাক, রোড রোলার, ডাম্প ট্রাক ও এম্পটি কনটেইনার হ্যান্ডলার।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, পদ্মা সেতু চালুর আগেই মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সাম্প্রতিক সময়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত এই প্রকল্পে সাতটি ক্রেনের মধ্যে ১৪ সারির কনটেইনার হ্যান্ডলিং উপযোগী তিনটি, পাঁচ মিটার ব্যাসার্ধের ৩০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি মোবাইল হারবার এবং দুটি ১০ মিটার ব্যাসার্ধের ৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপারপাস ক্রেন রয়েছে। পাশাপাশি ১০টি স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার, দুটি ৩০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ফর্কলিফট ট্রাক, দুটি ৪০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ভেরিয়েবল রিচ ট্রাক, চারটি পাঁচ টন ক্ষমতাসম্পন্ন লো-মাস্ট ফর্কলিফট ট্রাক, ১৫টি তিন টন লো মাস্ট ফর্কলিফট ট্রাক, চারটি ১০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ডাম্প ট্রাক, ১০-১২ টন ক্ষমতাসম্পন্ন রোড রোলার এবং নয় টন ক্ষমতাসম্পন্ন এম্পটি কনটেইনার হ্যান্ডলার মোংলা বন্দরে স্থাপন করা হবে।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে ঢাকা ও এর আশপাশের আমদানি-রফতানি পণ্য, বিশেষ করে গার্মেন্ট সামগ্রী মোংলা বন্দরের মাধ্যমে পরিবহন সহজ হবে। মোংলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে নানা পণ্যের আমদানি-রফতানি বাড়বে। ভারত, নেপাল ও ভুটানে ট্রানজিট সুবিধা চালু হলে এ বন্দর ব্যবহারের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া মোংলা বন্দর থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত পশুর বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানির মাধ্যমে বছরে ৪৫ লাখ টন কয়লা পরিবহন হবে। এত করে মোংলা বন্দরের উপর চাপ অনেক বাড়বে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গতি ত্বরান্বিত করতে পদ্মা সেতু চারুর আগেই মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরী হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, ঢাকা-মাওয়া-মোংলা মহাসড়ক উন্নয়ন, পদ্মা সেতু, খানজাহান আলী বিমানবন্দর, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মোংলা বন্দর এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মোংলা ইপিজেড সম্প্রসারণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি কাজ এগিয়ে চলছে। এজন্য মোংলা বন্দরের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত এই প্রকল্পে মোংলা বন্দরে নতুন করে যন্ত্রপাতি/সরঞ্জাম যুক্ত হলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সময় সাশ্রয় হবে। দেশের আমদানী-রপ্তানীর দ্বিতীয় লাইফ লাইন মোংলা বন্দরের সক্ষমতা অনেক বাড়বে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে।

বর্তমানে মোংলা বন্দরে ছয়টি নিজস্ব জেটি, ব্যক্তি মালিকানাধীন সাতটি জেটি এবং ২২টি অ্যাংকরেজের মাধ্যমে ৩৫টি জাহাজ একসঙ্গে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বন্দরের মাধ্যমে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৭৮৪টি। যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে হয়েছিল মাত্র ১৩৯টি জাহাজ। এর মধ্যে অধিকাংশই আমদানিপণ্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় হয়েছে ২৬৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৯৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

প্রথমদিকে মোংলা বন্দরে জেটি নির্মাণের পর থেকে নাব্য সংকটের কারণে একটির অধিক জেটিতে জাহাজ হ্যান্ডল করা সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতিক সময়ে ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পন্ন হওয়ায় পাঁচটি জেটিতেই কাংখিত নাব্যতা থাকায় একসঙ্গে একাধিক জেটিতে জাহাজ হ্যান্ডল করা সম্ভব হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালে ১১ ডিসেম্বর ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ ‘দ্য সিটি অব লায়নস’ সুন্দরবনের পশুর নদীর জয়মনির গোল নামক স্থানে নোঙর মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দর যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৯৫১ সালের ৭ মার্চ জয়মনির গোল থেকে ১৪ মাইল উজানে চালনা নামক স্থানে এ বন্দর স্থানান্তরিত হয়। সেখান থেকে ১৯৫৪ সালের ২০ জুন এ বন্দরকে সরিয়ে মোংলায় সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলা হয়।

(এসএকে/এসপি/মে ০৮, ২০১৯)