জোটন চন্দ্র ঘোষ, হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার মুজাখালী গ্রামে শনিবার প্রতি বছরের ন্যায় শ্রী শ্রী কামাক্ষ্যা মাতার বাৎসরিক বড় পূজা বৈশাখ মাসের শেষ শনিবার শান্তিপূর্ণ ভাবে আনন্দঘন পরিবেশে হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে পূজা অর্চনার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল থেকে শুরু করে দিনব্যাপী চলে সনাতন ধর্মালম্বী ব্যক্তিদের এই মিলন মেলা।

জানা যায়, হিমালয় অধিপতি গিরিরাজ দক্ষ এক বৃহৎ বৈদিক যজ্ঞের আয়োজন করেন। অনাহুত দক্ষ কন্যা সতী, পিতার যজ্ঞানুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাকে র্ভৎসনা করেন। তখন তাকে শুনতে হয় শিব নিন্দা। পতি নিন্দা সইতে না পেরে সতী যজ্ঞানুষ্ঠানে আত্মহুতি দেন। স্ত্রীর আত্মহুতির ফলে ক্রুদ্ধ শিব দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠান ধ্বংস করে সতীর দেহ দাহ না করে কাঁদে নিয়ে প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। শিব নৃত্যের তান্ডবে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়। দেবতারা ভয়ে প্রমাদ গুনতে শুরু করেন। তখন ভগবান বিষ্ণু সুর্দশন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খন্ড খন্ড করে ভূতলে ফেলে দিলে ক্রুদ্ধ শিব শান্ত হয়। রক্ষা পায় ধারিত্রি, সতীর দেহাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ভারত বর্ষের বিভিন্ন স্থানে। গড়ে উঠে ৫১টি পীঠস্থান। সতীর জননেন্দ্রিয় পতিত হয় ভারতের আসামের কামরুপ জেলার নীলাচল পর্বতে। আর সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় কামরুপ কামাক্ষ্যা মাতার মন্দির। কামরুপ কাঁমাক্ষ্যা মাতার মন্দিরের পূজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বলা হয় পান্ডা।

জনশ্রুতি রয়েছে এমন কোন পান্ডা বা ভক্ত স্বপ্নদৃষ্ট হয়ে মেঘালয়ের সিমান্ত ঘেঁষা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার মুজাখালী গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীশ্রী কাঁমাক্ষ্যা মাতার মন্দির। প্রায় শত বৎসর পূর্ব থেকেই এইভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে শ্রীশ্রী কাঁমাক্ষ্যা মাতার পূজা। কালের বিবর্তনে আজ বিশাল অনুষ্ঠানের রুপ নিয়েছে। অনুষ্ঠানটি সফল ভাবে সম্পর্ণ্য করার লক্ষ্যে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার পিপিএম।

পূজায় উপস্থিত ছিলেন, হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন,পৌর মেয়র খায়রুল আলম ভূঞা, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা কমিটির আহবায়ক মদন মোহন সরকার, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক জয়দেব দত্ত, সহ-সভাপতি নরেশ চন্দ্র সরকার,সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সরকার অপু, শ্রী শ্রী কামাক্ষা মাতা মন্দিরের সভাপতি দেবতোষ সরকার,সাধারণ সম্পাদক সমীর সরকার লিটন, হালুয়াঘাট থানার পুলিশ পরির্দশক (ওসি তদন্ত) শ্যামল চন্দ্র সরকার প্রমূখ। এ ছাড়াও সনাতন ধর্মালম্বী সম্প্রদায়ের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আগত সনাতন ধর্মালম্বী ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।

(জেসিজি/এসপি/মে ১১, ২০১৯)