রহিম আব্দুর রহিম


টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে জন প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ শ্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গর্ভনেন্স ইনোভেশন ইউনিট আয়োজিত ‘স্থানীয় পর্র্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন বিষয়ক কর্মশালা সারা দেশের উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায় শুরু হয়েছে। এই কর্মশালার মূল্য উদ্দেশ্য ‘দেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ এজেন্ডা তথা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এমডিজি) এবং নির্বাচনী ইশতেহার পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা।

২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত মেয়াদের বৈশ্বিক এ উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রণয়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে। শুরু থেকেই সহস্রাবদ্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাফল্য আর্ন্তাজাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমর্তি উজ্জল করেছে। এসডিজি মূলত একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা, যার বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘ মেয়াদী বিষয়। যা যথাযথভাবে অর্জনের জন্য স্থানীয়করণ ও অগ্রাধিকার নির্ণয়ের বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় ‘গর্ভনেন্স ইনোভেশন ইউনিট’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তৃণমূলের উপজেলা, জেলা পর্যায়ের একটি সূচক নির্ধারণ করার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা অব্যাহত রেখেছেন।

১৭টি অভীষ্টের আওতায়, ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা এবং ২৩২টি সূচক রয়েছে। এর মধ্যে অভীষ্ট-১, ‘সব ধরনের দারিদ্রের অবসান’, যার ৭টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় সূচক রয়েছে ১২টি। অভীষ্ট-২, ‘ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার’, যার ৮ লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ১৩টি সূচক রয়েছে। অভীষ্ট-৩, ‘সকল বয়সী সকল মানুষের জন্য সু-স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ’, এর ১৩টি লক্ষ্যমাত্রার আওতার সূচক ২৬টি। অভীষ্ট-৪, ‘সকলের জন্য অর্ন্তভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি’, যার ১০টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় সূচক রয়েছে ১১টি। অভীষ্ট ৫, ‘জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন’, যার ৯টি লক্ষমাত্রার আওতায় সূচক রয়েছে ১৪টি। অভীষ্ট-৬, ‘সকলের জন্য পানি ও স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ’, যার ৮টি লক্ষ্যমাত্রার

সূচক ১১টি। অভীষ্ট-৭, ‘সকলের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ¦ালানী সহজলভ্য করা’, যার ৫টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ৬টি সূচক। অভীষ্ট-৮, ‘সকলের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কর্ম সুযোগ সৃষ্টি এবং স্থিতিশীল, অর্ন্তভুক্তি মূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃত্তি অর্জন’, যার ১২টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ১৭টি সূচক। অভীষ্ট-৯, ‘ অভিঘাত সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ, অর্ন্তভুক্তিমূলক ও টেকসই শিল্পায়নের প্রবর্ধন এবং উদ্ভাবনার প্রসারণ’ যার ৮টি লক্ষ্যমাত্রায় ১২টি সূচক রয়েছে। অভীষ্ট-১০, ‘অন্ত: ও আন্ত: দেশীয় অসমতা কমিয়ে আনা’ যার লক্ষ্যমাত্রা ১০টির আওতায় সূচক ১১টি। অভীষ্ট-১১, ‘অর্ন্তভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত সহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলা’, যার ১০টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ১৫টি সূচক রয়েছে। অভীষ্ট-১২, ‘পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন ধরণ নিশ্চিত করা’, যার ১১টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় সূচক ১৩টি। অভীষ্ট-১৩, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় জরুরী কর্মব্যবস্থা গ্রহণ’, যার ৫টি লক্ষ্যমাত্রার সূচক রয়েছে ৭টি। অভীষ্ট-১৪, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার’, যার ৮টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় সূচক রয়েছে ১৩টি। অভীষ্ট-১৫, ‘স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের পুুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা প্রদান এবং টেকসই ব্যবহারে পৃষ্টপোষনা, টেকসই বন ব্যবস্থাপনা, মরু করণ প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা এবং ভূমির অবক্ষ্যয় রোধ ও ভূমি সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় পুরনরুজ্জীবন এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস প্রতিরোধ’, যার ১২টি লক্ষমাত্রার আওতায় ১৪টি সূচক রয়েছে । অভীষ্ট-১৬, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অর্ন্তভূক্তি মূলক সমাজ ব্যবস্থার প্রচলন, সকলের জন্য ন্যায় বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করা এবং সকল স্তরে কার্যকর, জবাবদিহিতাপূর্ণ ও অর্ন্তভূক্তি মূলক প্রতিষ্ঠান বিনিময়’, যার ১২টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় সূচক রয়েছে ২৩টি। সর্বশেষ্ট অভীষ্ট-১৭, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশি^ক অংশীদারিত্ব, উজ্জীবিত ও বাস্তবায়নের উপায় সমূহ শক্তিশালী করণ’, যার ১৯টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ২৫টি সূচক রয়েছে।

১৭টি অভীষ্ট যেদিন এই এই পৃথিবীতে বাস্তবায়িত হবে. সেইদিন বলা সম্ভব ‘আমরাই পৃথিবীর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। সহস্রাব্দ অভীষ্ট বাস্তবায়ন সম্পর্কিত পঞ্চগড় জেলা পর্যায়ের সেমিনারটি গত ৭ মে জেলা প্রশাসকের দরবার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সেমিনারে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ জয়নুল বারী মূখ্য আলোচ্যক হিসাবে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন। প্রাবন্ধিক সাবিনা ইয়াসমিন সেমিনারের শুরুতেই প্রাঞ্জল ভাষায় ‘ফাইভ পি’ সম্পর্কে ধারনা দেন। এর মধ্যে People (জনগণ), Peaceful (শান্তিপূর্ণ), Partnership (অংশীদারিত্ব), Planet (ধরিত্রী বা পৃথীবি), Prosperity (সফলতা বা উন্নতি), অর্থ্যাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন’, বিশ্বের সকল জনগণ শান্তিপূর্ণ অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে যেদিন ধরিত্রী বা পৃথিবী সাজাতে পারবেন সেইদিনই মানব সভ্যতার সার্বিক সফলতা বা উন্নতির যবনিকা ঘটবে।

সরকারি কর্মচারী, বেসরকারি উন্নয়ন কর্মী, জন প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, আইনজীবি, শিক্ষক, শিক্ষানুরাগী, শ্রমিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন স্তরের একশ জন ব্যক্তি সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারের গ্রুপ আলোচনায় উঠে আসে, পঞ্চগড়ের স্থানীয় একটি সূচক’, যেটি ধরিত্রী বা পৃথিবীর সম্পর্কিত স্থানীয় সমস্যা। অর্থ্যাৎ পঞ্চগড়ের মূল্য সমস্যা অপরিকল্পিত পাথর ও বালি উত্তোলন, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অবাধ লুটপাট, ৩৩টি নদ-নদী পঞ্চগড়ের জেলায় সবকটি নদীর নাব্যতা ও গতি পথ বিলুপ্ত হওয়া, নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের পঞ্চগড়, ভারত, নেপাল, ভূটান এবং চীনের প্রবেশদ্বার হলেও এখানে নেই সু-পরিকল্পিত পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন। অংশ গ্রহণকারীর মোট ৮টি গ্রুপের দলীয় আলোচনায় ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে, পরিবেশ বিধংসী কর্মকান্ড বন্ধের সুপারিশ, নদ-নদীগুলোর খনন এবং পর্যটন শিল্পল্পের ক্ষেত্র সৃষ্টি ও উন্নয়নের কথা।

সহস্রাবদ্ধ-অভীষ্ট লক্ষ্যের মোট সূচক ৩৯টির সাথে সারা দেশের প্রত্যেক জেলার আর্থ-সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ার বিচার বিশ্লেষণে ১টি সূচক নিয়ে মোট ৪০টি সূচকের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন মূলক কাজ করতে সরকার বদ্ধ পরিকর। সরকার তার পরিকল্পনা অনুযায়ী সকল কিছুই বাস্তবায়ন করবে এটাই নিশ্চিত।

তবে প্রতিটি জেলায় নির্ণয়কৃত স্থানীয় সূচকটিকে যদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন ফর্মের ১ম স্তরে সরকার ফেলতে পারেন, তবেই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য এবং সম-সাময়িক জনসম্পৃক্ত উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকবে এবং যা তৃণমূল পর্যায়ে ভুক্তভোগী মহলে প্রশংসা কুড়াবে। অব্যাহত সেমিনার গুলোতে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের কিষাণ-কিষাণীর উপস্থিতি এবং বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্তদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়, তবেই সহ¯্রাবদ্ধ অভীষ্ট ‘শিকড় থেকে শিখরে’ পৌঁছবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

লেখক : সাংবাদিক, কলামনিস্ট, শিশু সংগঠক ও নাট্যকার।