শামীম হাসান মিলন, চাটমোহর (পাবনা) : খুব ছোট বয়সে বাবা তার মাকে ত্যাগ করে চলে গেছেন। একমাত্র ছেলের ভবিষ্যতের জন্য ছোট শিশুকে তার নানা নানীর কাছে রেখে মাকেও যেতে হয়েছে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায়। বাবা মা হীন শিশু নিজের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে পড়ালেখায় হয়ে ওঠে ভীষন প্রতিভাবান মেধাবী একজন ছাত্র।

পড়ালেখার পাশাপাশি স্কুল ছুটির দিনে গ্রামেই প্রতিবেশীদের জমিতে দিন মজুরি করে কিছু টাকা পেয়ে পড়াশুনা চালিয়েছে। বই পড়ে শিখেছে ইলেট্রিকের কাজ। গ্রামের বাড়ি বাড়ি ইলেকট্রিকের ছোট খাটো কাজ করে যে টাকা পেয়ে থাকে সেটা দিয়ে ক্রয় করেছে পড়াশুনার নানা উপকরন।

এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পাবনার চাটমোহর সেন্ট রীটাস হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে জাহাঙ্গীর আলম। সে উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের অমৃতকুন্ডা গ্রামের জাহানারা খাতুনের সন্তান ও জাহের প্রামাণিকের নাতী। তার বাবাকে সে কখনও দেখেনি। মা পোশাক কারখানায় চাকুরী করে যে বেতন পান সব খরচ বাদ দিয়ে সেখান থেকে কিছু টাকা ছেলের পড়াশুনার জন্য পাঠাতেন। সেই টাকা স্কুলছাত্র জাহাঙ্গীরের প্রয়োজনের তুলনায় টাকার পরিমান ছিল নিতান্তই কম।

সব বাধা পেরিয়ে ছোট বেলা থেকেই পড়াশুনায় জাহাঙ্গীর ছিল ভীষন মেধাবী। সে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ এবং অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে। এতো কিছুর পরে অনেক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সর্বশেষ এসএসসি পরীক্ষায় ঈশর্^াণীয় ফলাফলের পরে জাহাঙ্গীরের ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন নিয়ে ভীষন চিন্তায় সে। মায়ের সামান্য উপার্জনের টাকা দিয়ে কিভাবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করবে সে চিন্তায় যেন দিশেহারা সে। তাহলে কি টাকার অভাবে থেমে যাবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন।

এসএসসিতে ভাল ফল করেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহন নিয়ে হাতাশা ব্যক্ত করে মেধাবী ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার বাবা থেকেও নেই, মা ঢাকায় পোশাক শ্রমিকের কাজ করে যে পরিমান টাকা আমাকে দিতো সেটা দিয়ে আর আমি অন্যের জমিতে কাজ করে কিছু টাকা উপার্জন করে তা দিয়ে এতোদিনে পড়াশুনার কাজে ব্যয় করেছি। এখন আমার স্বপ্ন এইচএসসিতে পড়াশুনার জন্য ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তি হবো। শুনেছি সেখানে পড়তে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার মা তো ওতো টাকা দিতে পারবে না। আমি সবাইকে গর্ব করে বলতাম বড় হয়ে আমি ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডাক্তার হব। এখন দেখছি টাকার অভাবে সে স্বপ্ন পুরণ হবেনা বলে মনে হচ্ছে।

মা জাহানারা খাতুন বলেন, আমার ছেলে এতো কষ্ট করে পড়াশুনা করে ভাল রেজাল্ট করেছে সে জন্য আমি ভীষন খুশি। শ্রমিকের কাজ করে যা টাকা পাই সেখান থেকে কিছু টাকা ওর পড়াশুনার জন্য দিতাম। তবে সে টাকা জাহাঙ্গীরের প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। এখন সে বড় ক্লাসে পড়বে, খরচও তো বেড়ে যাবে তাহলে কেমনে এতো টাকা আমি দিবো।

সেন্ট রীটাস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিস্টার মেরী মনিকা রেবারিও বলেন, দারিদ্রতাকে জয় করে লেখাপড়ার মাধ্যমে কিভাবে ভাল ফলাফল করা যায় তার জ¦লন্ত উদাহরন জাহাঙ্গীর আলম। সে ভীষন মেধাবী ও নম্র ভদ্র প্রকৃতির। মনের এক অজানা কষ্ট নিয়ে সবার থেকে সব সময়ই সে নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। সমাজের বৃত্তবানদের উচিৎ তার উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে তাকে আর্থিক ভাবে সহায়তা করা। আমি তার ভবিষ্যত সুন্দর সুখকর হোক এই কামনা করি।

(এস/এসপি/মে ১৩, ২০১৯)