রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মনিরা সুলতানা নামের দু’ সন্তানের জননীকে এসিড মেরে ঝলসে দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসিডদগ্ধের স্বামী নূর মোহাম্মদ বাদি হয়ে মঙ্গলবার প্রতিবেশি মাসুম বিল্লা’র নাম উল্লেখ করে এ মামলা দায়ের করেন।

এদিকে সোমবার বিকেলে সরেজমিনে আগরদাঁড়ি পূর্ব পাড়ায় যেয়ে ঘটনার সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিক মাসুম বিল্লাহ সম্পৃক্ত নয় বলে এলাকাবাসী দাবি করেছে।

আব্দুল মজিদ তিন বছর আগে নারকেল গাছ থেকে পড়ে যেয়ে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়ায় বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী। বাবা আব্দুল মজিদের চিকিৎসা, আগড়দাঁড়ি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সোহানাকে পড়াতে ও সংসারের খরচ বহন করতে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন মাসুম বিল্লাহ।

আগরদাঁড়ি গ্রামের তাহমিনা খাতুন, শাহানারা খাতুন তার ভাই হারুন অর রশিদসহ কয়েকজন জানান, আব্দুল মজিদ ও মনিরা সুলতানার মূল ওয়ারেশদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ থাকলেও আট বছর আগে তা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বর্তমানে সীমানা নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। মনিরা খাতুন সম্পর্কে আব্দুল মজিদের দূর সম্পর্কিত বোন। এক সপ্তাহ আগে ঘুর্ণিঝড় ফণির আঘাতে একটি দেবদারু গাছের ডাল ভেঙে পড়া ও মাসুম বিল্লাহ কেটে নেওয়া নিয়ে মনিরার সঙ্গে বিরোধ হয়। মনিরার মাঝে মাঝে ফিটের ব্যায়মো ছিল বলে তারা জানান।

তারা আরো জানান, মনিরা সুলতানার সৌদি আরব প্রবাসী স্বামী নূর মোহাম্মদ রোববার সন্ধ্যায় বাড়ি আসেন। রাত ৯টার দিকে তিনি ঘরের ছাদে শুয়েছিলেন। এ সময় বাথরুমে গোসল করতে থাকা মনিরার পিছনে কে বা কাহারা এসিড ছুঁড়ে মেরে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে তারা এসে পানি ঢালের ও স্থানীয় চিকিৎসক ইয়ারুল ইসলামকে খবর দেন। এ সময় মনিরা কাউকে এসিড ছুঁড়তে দেখার কথা বলেননি। অথচ সোমবার সকালে মাসুম বিল্লাহ নাকি এসিড ছুঁড়ে মেরেছে বলে মনিরা দাবি করেছে। মাসুম বিল্লাহ এ ধরণের কাজ করতেই পারেনা বলে দাবি করেন তারা।

অসহায় পরিবারের জমি কৌশলে হস্তগত করার জন্য বিদেশ থেকে মোটা টাকা নিয়ে আসা স্বামীর পরিকল্পনায় মনিরা কৌশলে এসিড ছোঁড়ার নাটক করেছে বলে দাবি তাদের। তারা অসহায় পরিবারের পক্ষাঘাতগ্রস্ত আব্দুল মজিদকে বাঁচাতে তার ছেলে মাসুমকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান। এমনকি সোমবার সকাল ১১টায় মনিরাকে সদর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে খুলনা অথবা ঢাকা এসিড সারভাইভাস ফাউণ্ডেশনে ভর্তির পরামর্শ দিলেও পরবর্তী সময় থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তিনি কিভাবে বাড়িতে কাটালেন সেটা তাদের বোধগম্য হয়নি।

জানতে চাইলে বাঁশঘাটা গ্রামের মোঃ মজনুর রহমান জানান, তারন কিছু বলার নেই। মেয়ের গায়ে এসিড লেগেছে। তাই মেয়ে যেটা বলবে সেটাই ঠিক।

বেসরকারি সংস্থা স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মধাব চন্দ্র দত্ত জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে এসিড নিয়ে কাজ করছেন। মনিার পিঠে যেভাবে এসিড মারার দাগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাতে কিছুতে মাখিয়ে ভিজা গায়ে লাগানো বলে মনে হয়েছে। কারণ এসিড ছুঁড়ে মারলে তা পিঠের বিভিন্ন স্থানে লাগত।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঘটনার সঙ্গে মাসুম বিল্লার জড়িত থাকার কথা তিনিও বিশ্বাস করতে পারছেন না। এরপরও ভিকটিােমর জবানবন্দি অনুযায়ি তার স্বামী নুর মোহাম্মদের দেওয়া এজাহারটি মঙ্গলবার রেকর্ড করা হয়েছে। দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে মাসুম বিল্লাহকে।

(আরকে/এসপি/মে ১৪, ২০১৯)