শামীম হাসান মিলন, চাটমোহর (পাবনা) : পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান ও তার সহযোগী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বিকেলে ৪১ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত শিক্ষকরা থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) হয়েছে। 

জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একই কলেজের বিভিন্ন বিভাগের ৪১জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত জিডিতে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ আনা হয়।

জিডি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি করণের পদ সৃজনের তথ্য ছকে, অধ্যক্ষের প্রত্যয়ন পত্রে, মন্তব্যে মিথ্যা তথ্য প্রদান, ফাইলে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সরবরাহ না করাসহ অধ্যক্ষের সার্বিক অসহযোগিতার কারণে গত ৯ মে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমারের কাছে ওই কলেজের বিভিন্ন বিভাগের মোট ৫১ জন শিক্ষক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এরপরেই ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান এবং তার কিছু অনুসারী ওই শিক্ষকদের প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা মঙ্গলবার বিকেলে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চাটমোহর থানায় অধ্যক্ষসহ মোট ১২ জনকে অভিযুক্ত করে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি নং-৫১১।

অভিযোগে আরও জানা যায়, চাটমোহর সরকারি কলেজের নিয়মিত শিক্ষকদের পদ সৃজনের জন্য অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তথ্য ছক, মন্তব্য এবং প্রত্যয়নপত্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক বেঁধে দেয়া সময়ের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে অনেক বিলম্বে, গোপনীয়ভাবে শিক্ষকদের দেখতে না দিয়েই কলেজের সভাপতি ও ইউএনও সরকার অসীম কুমারের কাছে জমা দেন। এতে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান মিথ্যা তথ্য দিতে পারেন এমন আশংকা থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা ইউএনও’র কাছে অধ্যক্ষের জমা দেয়া কাগজগুলো দেখতে চেয়ে আবেদন করেন। পরে কাগজগুলো দেখালে অধ্যক্ষ কর্তৃক পূরণকৃত কাগজগুলোতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জমা দেয়ার বিষয়টি নজরে আসে ওই শিক্ষকদের। এরমধ্যে নিয়মিত উপস্থিত শিক্ষককে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত দেখানো, বৈধ শিক্ষককে তালিকা থেকে বাদ দেয়া, অনেকের প্রত্যয়ন পত্রে স্বাক্ষর না করা এবং ফাইলপত্রে বেশ কয়েকটি কাগজপত্র সংযোজন না করেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান জমা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে বুধবার বেলা আড়াই টার দিকে ফোনটি রিসিভ করেন এক নারী। তিনি বলেন স্যার একটু ব্যস্ত আছেন, এখানে নাই। তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজের পরিচয় না দিয়ে কলেজ থেকে বলছি বলে ফোন রেখে দেন।

চাটমোহর থানার ওসি সেখ নাসীর উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার বেশ কয়েকজন শিক্ষক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এর আগে কলেজ অধ্যক্ষও একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যে কোন অপ্রীতকর ঘটনা এড়াতে কলেজ এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার জানান, পদ সৃজন সংক্রান্ত কাগজপত্র মৌখিকভাবে বার বার উপস্থাপন করতে বলা হলেও অধ্যক্ষ সাহেব তা উপস্থাপন করতে গড়িমসি করেন, শেষ সময়ে তিনি শুধুমাত্র তালিকা নিয়ে আসলেও কাগজপত্র উপস্থাপন করেন নি। ইতোমধ্যে ডিসি স্যার বরাবর বেশ কিছু অভিযোগ পড়েছে যার জন্য ডিসি স্যার এসিল্যান্ড (চাটমোহর) ইকতেখারুল ইসলাম এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. বায়েজীদ বিন আকন্দকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটি বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করার জন্য অধ্যক্ষ বরাবর মৌখিক, সরাসরি এবং পত্র মারফত যোগাযোগ করলেও তিনি (অধ্যক্ষ) তা উপস্থাপন করেননি বরং পনের দিনের সময় চেয়ে উল্টো পত্র প্রেরণ করেছেন।

(এস/এসপি/মে ১৫, ২০১৯)