শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে উৎপাদন বন্ধ রাখা ও প্রকল্প এলাকার উন্নয়ন কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না করায় এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ (এলডি) পাওয়ার কথা থাকলেও বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি উল্টো ওই চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে একের পর এক অবৈধ সুবিধা দিচ্ছে। এতে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বৃহস্পতিবার লিখিতভাবে এই অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্য শামসুর রহমান শরীফ বলেছেন, অভিযোগ নিয়ে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা হবে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সিএমসি কনসোর্টিয়ামের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কাজ না করলে তাদের ক্ষতিপূরণ (এলডি) দিতে হবে। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ না করলেও তাদেরকে বিল দেয়া হয়েছে। এই বিলসহ যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য অতিরিক্ত বিল এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে চুক্তির বাইরে বিলসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিল দেয়া হয়। পরপর চারটি পরিচালনা পর্ষদের সভায় এসব বিষয়ে আপত্তি উঠলেও ওই কোম্পানির পক্ষে সাফাই গেয়ে ও সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে ওই বিল পাস করিয়ে নেয়া হয়।

বিল পাস করার কৌশল হিসেবে চীনা কোম্পানি প্রায় সপ্তাহখানেক কয়লা উৎপাদন বন্ধ রাখে। এভাবে কোম্পানিকে জিম্মি করে কয়েকদফায় এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম প্রায় ১৮০ কোটি টাকা আদায় করে নিয়েছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, চীনা কনসোর্টিয়ামের সাথে বড়পুকুরিয়া কয়লা কোম্পানির চুক্তি অনুযায়ী কয়লা আদ্রতার (পানি) পরিমাণ ৫ দশমিক এক শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। এর বেশি থাকলে বাড়তি পানির দাম বাদ দিয়ে ঠিকাদারকে কয়লার দাম পরিশোধ করা হবে। কিন্তু বর্তমানে অনেক বেশি পরিমাণ পানি থাকছে। অথচ বাড়তি পানির দাম বাদ না দিয়ে কয়লার সঙ্গে পানির একই মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমান চীনা কোম্পানিকে ওই বিলগুলো পাইয়ে দেন। এতে বড়পুকুরিয়া কোম্পানি আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছর আগস্টে বড়পুকুরিয়া কয়লা কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চলতি দায়িত্ব নিয়েই অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন ফজলুর রহমান। প্রফিট বোনাস আটকে রেখে কয়লা খনি কোম্পানির স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকলের কাছ থেকে মাথাপিছু ৪০ হাজার টাকা করে প্রায় ৫৮ লাখ টাকা আদায় করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনা কারণে বদলি, শোকজও করেন। এসব ঘটনা তদন্তে পেট্রোবাংলা তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কোনো তদন্ত প্রতিবেদন ্এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানিতে অনিয়মের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে অভিযোগ উঠেছে, মাইনিং,সারফেজ ও পারসেস জিএম সাইফুল ইসলাম তার মনোনীত ঠিকাদারকে দিয়ে কোটেশন এর কাজ পাইয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।খনি এলাকার মের্সাস এন এফ টের্ডাস ও এম এস টের্ডাস কে এ ভাবে কাজ দিয়ে থাকেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ঠিকাদার বলেন কাজ না করেও বিল তুলে ভাগ বাটোয়ারা করেন সংশ্লিষ্ট জি এম। কয়লা খনির একটি চক্র দেশে যন্ত্রাংশ ক্রয় করে বিদেশি বিল ভাউসার দেখিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে আসছে । এতে ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি।

(এস/এসপি/মে ১৬, ২০১৯)