মাগুরা প্রতিনিধি : লিচুর বাম্পার ফলন ফলন হওয়ায় বিশাল খুশি মাগুরার লিচু চাষীরা । লিচুগ্রাম খ্যাত সদর উপজেলার হাজরাপুর, ইছাখাদা, খালিমপুর, মিঠাপুর,হাজিপুরসহ অন্তত ২০ গ্রামে এখন  লিচুর ভরা মৌসুম। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে লাল রঙ্গের পাকা টসটসে রসালো  লিচু। মাগুরা উপর দিয়ে ঝিনাইদহ হয়ে যারা চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায় যান জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দুরত্বে ইছাখাদা পৌঁছলেই তারা রাস্তার দু’ধারে দেখতে পাবেন সারি সারি লিচু বাগানের এ মনোরম দৃশ্য। লিচু গ্রামখ্যাত এসব এলাকার দেড় হাজার বাগান  থেকে এবার প্রায় ১৫ থেকে ২০  কোটি টাকার লিচুর কেনাবেচা হবে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। চাষীরা বলেন এবছর যেমন ফলন হয়েছে, তেমন দাম পেয়ে আমরা খুব খুশি। 

মাগুরা সদর উপজেলার হাজরাপুর, হাজীপুর ও রাঘবদাইড় ইউনিয়নের ইছাখাদা, মিঠাপুর, গাঙ্গুলিয়া, খালিমপুর, মির্জাপুর, পাকাকাঞ্চনপুর, বীরপুর, রাউতড়া, বামনপুর, আলমখালী, বেরইল, লক্ষিপুর, আলাইপুর , নড়িহাটিসহ ২০টি গ্রামের চাষিরা গত ২ দশক ধরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই লিচু চাষ করে আসছে।

সরেজমিন,লিচু বাগানগুলো ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারীরা চাষীদের কাছ থেকে অগ্রিম কিনে নেয়া বাগানে লিচু সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন অনেক আগেই। বাগানে বাগানে চলছে লিচু সংগ্রহ ও বাজারজাত করনের কাজ।

ইছাখাদা গ্রামের অন্যতম লিচু চাষি সাইফুল ইসলাম, মুরাদ হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান- একসময় এ এলাকার কৃষকরা ধান-পাটসহ বিভিন্ন প্রকারের ফসল চাষে অভ্যস্ত ছিল। যা থেকে তাদের উৎপাদন খরচ উঠতোনা। যে কারণে তারা পেঁপে পেয়ারার পাশাপাশি লিচু চাষ শুরু করে। পরবর্তীতে লিচু চাষ অপেক্ষাকৃত লাভজনক হওয়ায় গোটা এলাকার কৃষকরা লিচু চাষ শুরু করে। বর্তমানে হাজরাপুর, হাজিপুর, রাঘব দাইড় এ তিন ইউনিয়নের ২০ গ্রামের কৃষকরা শুধু লিচুর চাষ করছে। অসংখ্য লিচু চাষি আছেন যারা শুন্য থেকে শুরু করে এখন লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। এবার গোটা গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে তারা আশা করছেন । গত বছরের বিক্রি ছিল একইরকম ।

লিচু চাষি কাজী সাইফুল ইসলাম জানান, এবার দুই-তিন সপ্তাহ তীব্র খরার করার কারণে বাগানের লিচু ফেটে যাচ্ছে । অনেক লিচু রং বাদামী হয়ে যাচ্ছে। আমি ১৫-১৬ বিঘা জমিতে লিচু চাষ করেছি । জেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষন গ্রহন করে লিচুর পরিচর্যা শুরু করি । এ বছর সার অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আমার ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে । প্রতিদিন বাগানে নারী শ্রমিকসহ ১৫ জন শ্রমিক কাজ কওে । তাদের মুজুরি জনপ্রতি ৩০০-৬০০ টাকা হারে খরচ হচ্ছে । বর্তমানে আমার বাগানের লিচু বরিশালের শিবচর,পাচঁবিবি,ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় যাচ্ছে । তবে রমজান শুরু হওয়াতে অনেক লিচুর চাহিদা কমে যাওয়ায় আমাদের অনেক টাকার ক্ষতি হবে ।

চাষিরা আরো জানান, লিচুর বাগান করতে প্রথম বছর একটু খরচ হয়। পরবর্তীতে তেমন আর উল্লেখযোগ্য খরচ নেই বললেই চলে। প্রতি বছর লিচুর ফুল আসলে শুধু গাছে স্প্রে ও সামান্য পরিচর্যা করতে হয়। এলাকার মাটি লিচু চাষের জন্য উপযোগি। এখানে বোম্বায়, চায়না থ্রী, মোজাফ্ফর ও স্থানীয় হাজরাপুরী জাতের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। মৌসুমের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারী ফড়িয়া ও আড়তদারা এসে লিচুর বাগান কিনে তা গাছ থেকে ভেঙ্গে ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক লিচু এ এলাকা থেকে চালান হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৫৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে । তার মধ্যে সদরে ৪৮০ হেক্টর, শালিখায় ৪০ হেক্টর, শ্রীপুরে ৩৫হেক্টর ও মহম্মদপুরে ২৫ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে ।

কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আমিন জানান, আহবাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার মাগুরা লিচুর ফলন ভালো হয়েছে । লিচুর ভালো ফলনের জন্য আমরা জেলার শতাধিক লিচু চাষীকে রাজশাহী ফল গবেষণা ইনষ্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষক এনে তাদের প্রশিক্ষন ও পরামর্শ প্রদান করেছি । প্রতিটি লিচুর ফলন যাতে ভালো হয় সেজন্য আমাদের মাঠ পর্যায়ের প্রকল্প কর্মকর্তারা নিয়মিত কাজ করে চলেছে । আশাকরি এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে । তবে দুই-এক সপ্তাহ তীব্র তাপদাহ থাকায় অনেক বাগানের লিচু ফেটে গিয়েছে । কারণ প্রচন্ড তাপদাহ থাকলে পাকা লিচু ফেটে যায় । তাই আমরা কৃষি বিভাগ থেকে লিচু চাষীদের ভালো পরামর্শ দেওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।

(ডিসি/এসপি/মে ১৯, ২০১৯)