সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুর গ্রামে নন্দিত কথা সাহিত্যিক প্রয়াত ড. হুমায়ুন আহমেদের হাতে গড়া স্বপ্নের স্কুল “শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ”। এবার বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হলে ২৩ বছর পর শিক্ষক কর্মচারীসহ সব মানুষের মুখে ফুটবে চাঁদের হাসি।

শনিবার বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নেত্রকোনা-৩ আসনের এম.পি অসীম কুমার উকিল। তিনি মোবাইল ফোনে সুদৃঢ় আশ্বাসের কথা হুমায়ুন আহমেদের সহোদর বিজ্ঞানী ড. জাফর ইকবালকে এমনভাবেই জানালেন, কেন্দুয়া উপজেলায় একটি বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হলেও হুমায়ুন আহমেদের স্বপ্নের স্কুল শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এমপিওভুক্ত হবে। একই সঙ্গে তিনি আগামী নভেম্বর মাসে হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিনে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে খোলা মাঠে একটি ক্লাশ নেয়ার জন্যও ড.জাফর ইকবালকে বিনীত আহ্বান জানান।

শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, ১৯৯৬ সালে ড.হুমায়ুন আহমেদ কুতুবপুর গ্রামে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সম্পূর্ণ বিজ্ঞান মনষ্ক চিন্তা চেতনায় গ্রামের অবহেলিত শিশু কিশোরদের সময়োপোযোগী সু-শিক্ষাগ্রহণ করে যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে এ জন্য বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৬ সালে শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম। ২০১১ সালে নিম্নমাধ্যমিক ও ২০১৩ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। তিনি জানান ২০১২ সালে হুমায়ুন আহমেদের জীবদ্দশায় বি.সি.সি ভবন থেকে কম্পিউটার ল্যাব দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে যা অকেজো। প্রধান শিক্ষক বলেন, বর্তমানে ৩শ ৫৯ জন ছাত্র-ছাত্রী ও ১৫ জন শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছে।

প্রতি বছর জে.এস.সি, এস.এস.সি পরীক্ষায় শতভাগ পাস সহ উল্লেখযোগ্য জি.পি.এ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে ভালো ফলাফল অর্জন করে আসছে। কিন্তু দীর্ঘ্যদিনেও প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তি না হওয়ায় শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতর দিন যাপন করছেন।

তিনি জানান, হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে শিক্ষক কর্মচারীদের সাধ্যমতো বেতন/ভাতা দিয়ে যাচ্ছেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, হুমায়ুন আহমেদ স্যার চাইতেন যাতে কোন এম.পি বা মন্ত্রী শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ পরিদর্শনে এসে যাতে কোন গাড়ীর বহর নিয়ে না আসেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদেরকে লাইন করে দাঁড়িয়ে রেখে অতিথিদের যাতে ফুল ছিটিয়ে না দিতে হয়। এম.পি অসীম কুমার উকিল শনিবার কোন গাড়ীর বহর না নিয়েই একা একা বিদ্যালয়ে আসেন এবং তাকে কোন ফুলের তোরা দিতেও আগেই মানা করে দেন।

প্রধান শিক্ষক বলেন, মনে হয় হুমায়ুন স্যারের মনের কথা এম.পি অসীম কুমার উকিল আগে থেকেই জানতেন। তিনি বিদ্যালয়ে এসেই আমরা যেসব সমস্যার কথা বলতাম তিনি নিজে থেকে তা বলতে শুরু করেছেন। কম্পিউটার ল্যাব পরিদর্শনে গিয়ে এর বেহাল দশা দেখে সেখানে দাঁড়িয়েই মোবাইল ফোনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের সঙ্গে কথা বলে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের আশ্বাস দেন।

এছাড়া বিদ্যালয়ের মাঠ উঁচু করে দেয়া, খনন করা পুকুরটি কিভাবে লাভজনক করা যায় এবং নিরাপত্তার স্বার্থে বাউন্ডারী দেয়াল নির্মাণ সহ বিদ্যালয় সংযোগকারী সড়ক পাকা করনের মাধ্যমে সংস্কার করে দেয়ার কথা ঘোষনা দেন এম.পি অসীম কুমার উকিল।

হুমায়ুন আহমেদের চাচা আলতাফুর রহমানের বরাত দিয়ে প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, এবার বিদ্যালয়টি এমপিও ভূক্ত হলে সবার মুখে ফুটবে চাঁদের হাসি এমনটিই মন্তব্য করেছেন বিছানায় শুয়ে শুয়ে। তিনি এমপি অসীম কুমার উকিলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শহীদ স্মৃতিবিদ্যাপীঠ এমপিও ভূক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে শতভাগ যোগ্যতা রাখে। এটি এমপিও ভূক্ত হলে শিক্ষক কর্মচারীদের আর্থিক দৈনদশা দূর হয়ে আগামী দিনে শিক্ষার মান উন্নয়নে আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে।

বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এম.পি অসীম কুমার উকিল বলেন, নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পরে। বিদ্যালয়টির এমপিও ভূক্তি সহ সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আশ্বাস দেন তিনি।

(এসবি/এসপি/মে ১৯, ২০১৯)