স্টাফ রিপোর্টার : ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগ রোধে মনিটরিং চান কূটনীতিকরা। রবিবার সচিবালয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব জানান।

বৈঠকে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বরার্ট চ্যার্টাটন ডিকশন, জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার পিটার ফারেন হোল্টজ, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রিনি হলেনস্টেইনম সুইডেনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার অ্যান্ডার্স অর্থোস্ট্রমসহ জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস ও ইউএনডিপির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, এই অ্যাক্ট করার আগে সম্পাদক কাউন্সিলের সঙ্গে বসেছিলাম। আমরা সবার সঙ্গে বসে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরিবর্তনও এনেছিলাম এবং কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমরা মনিটরিংয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত সিরিয়াস, এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য করিনি বা স্বাধীনতা হরণ করার জন্য করিনি। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব হোক বা জনগণের বক্তব্যের স্বাধীনতা খর্ব হোক সেজন্য এই আইন করা হয়নি। শুধুমাত্র সাইবার ক্রাইম মোকাবেলা করার জন্য আইনটা করা হয়েছে। এটা যেহেতু সারা বিশ্বেই নতুন একটা আইন। অনেক হয়তো ভালো-মন্দ আছে। ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দিতে পারে, সেটা আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে আধুনিক করার মাধ্যমে সব সময় এগিয়ে নিয়ে যাব।’

‘(ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) আইনের অপপ্রয়োগ নিয়ে সম্প্রতি দুটো ঘটনা ঘটেছে। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মী ইমতিয়াজ মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেখানে খাগড়াছড়িতে যে ম্যাজিস্ট্রেট ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্ট জারি করেছেন সেটা তিনি করতে পারেন না। কারণ সেটা সম্পূর্ণ সাইবার ট্রাইব্যুনালভুক্ত। সে কারণে পরদিনই ত্রুটি ধরে ইমতিয়াজ মাহমুদের আইনজীবীকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে বলা হয়।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘হেনরি স্বপনকে জামিন দেয়া হয়। আমরা এ রকমভাবে মনিটরিং করে যাচ্ছি। কিন্তু এটাও ঠিক মনিটরিংয়ের জন্য একটা সুস্পষ্ট জায়গা থাকা উচিত। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছি, আমরা শিগগিরই মনিটরিংয়ের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসব।’

তিনি বলেন, ‘তারাও (কূটনৈতিকরা) আলাপ করবে এবং সহায়তা করবে। আলাপ শেষ হলে তাদের সঙ্গে আবার আলাপ হতে পারে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারার মতো যাতে কখনো অ্যাবিউস বা মিসইউসডের প্রশ্ন না ওঠে সেই কারণে আমরা একটা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে চাই। এই রকম মনিটরিং করা হলে আইনটা পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হবে। তখন পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাকে দিয়ে কমিটি করা হয়। এখানেও সেরকম কমিটি করব।’

সম্প্রতি দুটি ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের সুযোগ আছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বে যত আইন আছে সব আইনেই অপপ্রয়োগ করার একটু সুযোগ আছে। এটা এমন না যে শুধু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ব্যাপারে হয়েছে। সারা বিশ্বে যত আইন আছে সবগুলো অপপ্রয়োগ করে বলেই আদালত আছে আইনজীবীরা আছে। সেক্ষেত্রে এখানেও কিছু হতে পারে কিন্তু যাতে না হয় সেই কারণে সরকার সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছে।’

বৈঠকে দুটি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্ট্যাটাস হচ্ছে-বি। এ-হচ্ছে সবচেয়ে উচ্চতর গ্রেডিং। তারা আমাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে এসেছেন তা হচ্ছে যে, বি স্ট্যাটাস থেকে এ-তে আপগ্রেডেশনের জন্য কিছু ডিউটিস আছে যেগুলো সম্পন্ন করতে হবে। সেজন্য যেসব কাজ করার প্রয়োজন সেজন্য তারাও সহায়তা দিতে চেয়েছেন।’

‘তারা বলেছেন সিলেকশন প্রসেসে আইনের ৭ ধারায় একটা সার্চ কমিটি আছে যেটাতে স্পিকার চেয়ারম্যান এবং আরও ৫ জন সদস্য আছেন। তারা বলেছেন এই কমিটি থাকুক সঙ্গে সুশীল সমাজের সঙ্গে যদি আলাপ আলোচনা করে যেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়। সেটা আরও সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে, গ্রহণযোগ্যতা পেলে সারা বিশ্বে হিউম্যান রাইটস কমিশন যারা আপগ্রেডেশন করেন তারাও সন্তুষ্ট হবেন। এবং বি-স্ট্যাটাস থেকে এ-স্ট্যাটটাসে যাওয়ার পথ আরও সুগম হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটা ছিল আর্থিক স্বাধীনতা। আমি তাদের বলেছি আর্থিকভাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বাধীন। কারণ বাজেট বরাদ্দ তাদের চাহিদা মোতাবেক দেয়া হয়।’

(ওএস/এসপি/মে ১৯, ২০১৯)