স্টাফ রিপোর্টার : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন স্বীকার করেছেন বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের মিশনগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশি শ্রমিকদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা রাখেন। এছাড়া তিনি আরো বলেছেন, মিশনগুলোর বিরুদ্ধে একটি কমন অভিযোগ হচ্ছে- তারা ফোন ধরে না। যা সম্পূর্ণ সত্য। মিশনে নিচের পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ক্ষেত্রে হাসিমুখে বাংলাদেশিদের গ্রহণ করার মানসিকতায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চতুর্থ বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

শ্রমিকদের প্রতি নেতিবাচক মানসিকতা সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের মানসিকতা পরিহারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য মিশনগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মিশনগুলোকে সেখানকার বাংলাদেশিদের ডাটা বেইজ তৈরির নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

বৈঠকে কার্যবিবরণী অনুযায়ী এ কে আব্দুল মোমেন আরো বলেন, প্রবাসীদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ইস্যু/নবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে বেশি অভিযোগ উত্থাপিত হয়। পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করা হলে এবং ইলেক্ট্রনিক্স পাসপোর্ট চালু হলে অভিযোগের সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে। পাসপোর্ট ইস্যুর পাশাপাশি মিশনগুলো থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

এর আগে কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, বিভিন্ন মিশনের কার্যক্রম নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্ট না হলেও বাংলাদেশি শ্রমিক অধ্যুষিত দেশগুলোর মিশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীরা শ্রমিকদের দিকে সঠিকভাবে নজর রাখেন না বলে জনগণের ধারণা। মিশনগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক শ্রেণি ছাড়াও শিক্ষকতাসহ বেশ কিছু বাংলাদেশি উচ্চপদে কর্মরত আছেন, যাদেরকে মিশন থেকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি লেবাননের মিশন প্রধানের সাথে সৃষ্ট সমস্যার কারণে সেখানকার এক বাংলাদেশিকে জেল হাজতে পাঠানোর বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এর জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাহাবুব জামান বলেন, লেবাননের মিশন প্রধান কর্তৃক এক বাংলাদেশিকে জেল হাজতে পাঠানোর অভিযোগটি মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটি মিশনের প্রধান হচ্ছেন একটি ইনস্টিটিউশন, এটিকে বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে, যা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া মিশনগুলোতে ওয়েব বেইজড মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং এটি চালু হলে প্রবাসীদের হয়রানি অনেকাংশে কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।

এরপর প্রতিমন্ত্রী ও কমিটির সদস্য মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই হচ্ছে প্রবাসীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা এবং মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে প্রতিটি মিশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় অনুশাসন দেয়া হয়েছে।

তিনি লেবানন মিশন প্রধানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, অনেক সময় প্রবাসীরা দূতাবাসে গিয়ে এমন কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন, যখন পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ডাকা ছাড়া রাষ্ট্রদূতের পক্ষে অন্য কিছু করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া লেবার শ্রেণির যে সকল প্রবাসীরা বিদেশস্থ মিশনগুলোতে সেবা নিতে আসেন, তারাও অনেক সময় শঠতার আশ্রয় নিয়ে থাকেন এবং পত্রপত্রিকায় অনেক সময় ভুল তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমেও মিশনগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে জনমনে একটি নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এরপরেও মিশনে কর্মরত কর্মকর্তাগণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে থাকেন, যা কোনোক্রমে কাম্য হতে পারে না। তবে নিবিড় মনিটরিং-এর মাধ্যমে এ সকল সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। একইসাথে মিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো ধরনের অভিযোগ পেলে তা সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূতদকে অবহিত করার জন্য তিনি কমিটির সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানান।

(ওএস/এসপি/মে ১৯, ২০১৯)