আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষের পর এখন বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফলাফলের চুলচেড়া বিশ্লেষণ চলছে। দেশটির বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রায় সব সমীক্ষাই বলছে, ভারতের সরকার গঠনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন।

জরিপকারী সংস্থাগুলোর দেয়া জনমতের আভাস অনুযায়ী, গেরুয়া শিবির সহজেই এই ম্যাজিক ফিগার টপকে যাচ্ছে। কিন্তু, দেশের তিনটি রাজ্যের ফলাফলই আসলে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই রাজ্যগুলো হলো, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা। তিন রাজ্যের মোট আসন সংখ্যা ১৪৩। সংখ্যার নিরিখে তাই এই তিন রাজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অথচ এই তিনটি রাজ্যের ক্ষেত্রে একাধিক সংস্থা বিভিন্ন রকম ফলাফলের আভাস দিয়েছে। ফলে এই তিনটি রাজ্যে বাস্তব ফলাফল কী হতে চলেছে, তার ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করছে দিল্লির মসনদে কে বসতে যাচ্ছেন।

polls



দেশটির সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ৮০টি আসন রয়েছে। ২০১৪ সালে এই রাজ্যে ৭৩টি আসন পেয়েছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। এবারের নির্বাচনে রিপাবলিক টিভি-সি ভোটারের সমীক্ষা বলছে, উত্তরপ্রদেশের ৪০টি আসন যেতে পারে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের ঝুলিতে। অন্যদিকে, বিজেপি পেতে পারে ৩৮টি এবং কংগ্রেস দু'টি।

টাইমস নাউ-ভিএমআরের বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি এবং এনডিএ জোট পেতে পারে ৫৮টি আসন এবং ইউপিএ জোটের পকেটে যেতে পারে ২০টি আসন। টুডেস চাণক্যর সমীক্ষা বলছে, ইউপিএ জোট ১৩টি এবং বিজেপি পাবে ৬৫টি আসন। আজতক-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার পূর্বাভাস বলছে, উত্তরপ্রদেশে এনডিএ পেতে পারে ৬২ থেকে ৬৮টি আসন। তবে এসব জরিপের কোনোটিই কংগ্রেসকে ২টির বেশি আসন দিতে পারেনি। অর্থাৎ, সবমিলিয়ে জনমতের আভাস দেয়ার ক্ষেত্রে সমীক্ষক সংস্থাগুলোর সংখ্যার ব্যাপক তারতম্য সামনে আসছে।

polls

এই লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যার বিচারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হতে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির তীব্র লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলো বলছে, পশ্চিমবঙ্গে বড় ধরনের উত্থান ঘটতে চলছে বিজেপির। আজতকের সমীক্ষা বলছে, ৪২টি আসনের মধ্য বিজেপি এবং তৃণমূলকে সমান সংখ্যক আসন পেতে পারে। তাদের আভাস অনুযায়ী, তৃণমূল পেতে পারে ১৯ থেকে ২২টি আসন, বিজেপিও পেতে পারে ১৯ থেকে ২৩টি আসন।

তবে অন্যান্য সমীক্ষায় বিজেপি-তৃণমূলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলই। টুডেস চাণক্যর সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৮টি আসন পেতে পারে বিজেপি এবং ২৩টি আসন পেতে পারে তৃণমূল। কিন্তু টাইমস নাও-ভিএমআর আবার মনে করছে, ১১টি আসন পাবে বিজেপি এবং তৃণমূল পাবে ২৯টি আসন। রিপাবলিক-সি-ভোটারের সমীক্ষাতেও বিজেপি ১১ এবং তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি আসন পেতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল পেয়েছিল ৩৪টি এবং বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল ২টি আসন।

বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষায় প্রাপ্ত আসন সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে ওড়িশার ক্ষেত্রেও। বেশিরভাগ সমীক্ষা বলছে, এ রাজ্যে ২০১৪ সালের ফলাফল বদলে দিতে পারে এবারের বিজেপির উত্থান। গতবারের লোকসভা নির্বাচনে উপকূলবর্তী রাজ্যটির ২১টি আসনের মধ্যে বিজু জনতা দল (বিজেডি) পেয়েছিল ২০টি আসন এবং বিজেপি জিতেছিল ১টি আসনে।

কিন্তু এবার আজতকের সমীক্ষায় বলছে, ওড়িশার ২১টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেতে পারে ১৫ থেকে ১৯টি আসন। আর নবীন পট্টনায়কের দলকে ফিরতে হতে পারে শূন্য হাতে।

টাইমস নাও-ভিএমআর এবং রিপাবলিক সি-ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, ওড়িশার ২১টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেতে পারে ১২টি কিংবা ১০টি এবং নিউজ ২৪-টুডেস চাণক্যর সমীক্ষা বলছে, বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে ১৪ টি আসন। অপরদিকে, এই তিনটি সমীক্ষাতেই বিজেডিকে দেয়া হয়েছে যথাক্রমে ৮, ১১ এবং ৭টি আসন।

polls



বিহারে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এ বছর বিরোধী দলের জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। বেশিরভাগ সমীক্ষাই বলছে, বিজেপি-সংযুক্ত জনতা দল-লোক জনশক্তি পার্টি বিহারে ৪০টি আসনের মধ্যে ৩০টি আসনে জয়লাভ করতে পারে।

তবে নির্ণায়ক তিন রাজ্যের ক্ষেত্রে বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসাবগুলোতে তারতম্য দেখা দেয়ায় দেশটির অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, এই মুহূর্তে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না কে বসছে দিল্লির মসনদে। তবে শুধু এটা স্পষ্ট যে, এই তিন রাজ্যই একপ্রকার চূড়ান্ত করবে দিল্লির মসনদের দাবিদার কে? শেষ উত্তর জানা যাবে ২৩ মে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

(ওএস/এসপি/মে ২০, ২০১৯)