প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। কমপ্লেক্সটি দু’টি ভবনে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়িত।

হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সসহ জনবল সংকটে রয়েছে। এছাড়া চিকিৎসা সেবায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদীর অভাবে পদে পদে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। এসব কারণে ঝামেলা এড়াতে চিকিৎসকরা চ্যালেঞ্জ না নিয়ে রোগীদের রেফার্ড করে দেন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বলে একাধিক অভিযোগ করেছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। অপরদিকে, হাসপাতালে এক্সরে মেশিন, ইসিজিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় বাধ্য হয়েই রোগীদের রেফার্ড করার কথা স্বীকার করেছে সরকারী হাসপাতালের এই ডাক্তাররা।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ১৫ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের বিপরীতে বর্তমান আছেন মাত্র ৩ জন এবং ১৭ জন সাধারণ চিকিৎসকের বিপরীতে আছেন ৪ জন। অত্র হাসপাতালে অভিজ্ঞ ও সাধারণ মিলে ২৭ জন চিকিৎসকের স্থলে বর্তমান মাত্র ৭ জন চিকিৎসক রয়েছে।

হাসপাতালটিতে ২০০৫ সালে জনসাধারণকে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষে সরকার অত্যাধুনিক মানের একটি এক্সরে মেশিন বরাদ্দ দেন। মেশিনটি আসার পর থেকে কয়েকদিনের মধ্যে যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয়। ফলে মেশিন স্থাপনের পর থেকেই তা বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ইসিজি মেশিন, অপারেশন থিয়েটার, রোগী কল্যাণ সমিতিসহ রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বেশ কিছু সরঞ্জামের একই অবস্থা।

২০ মে সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহিলা ওয়ার্ডে মাত্র ৪ জন ও পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র ৫জন রোগী চিকিৎসা নেয়ার জন্য কাতরাচ্ছেন। হাসপাতালের বেডের রোগীদের অভিযোগ, ২৪ ঘন্টায় ডাক্তার মাত্র ১ বার (রাউন্ড) ঘুরে যায়। এমনকি কখনও ২দিন পর ১ বার ডাক্তার রাউন্ড দেয়। আর প্যারাসিটামল ছাড়া বাহির হতে সব ধরনের ঔষুধ কিনতে হয়। তাছাড়া আর কোন ঔষুধ সহজে মিলছে না এই হাসপাতালে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভর্তিকৃত একাধিক রোগী জানান, দূর্ঘটনায় কবলিত রোগী, মাথা ফাটা, মাথা ও পেট ব্যথা, ৩দিনের বেশী জ্বর, ডেলিভেরী, অর্শ, পাইলস্, নাক-কান- চোখের সমস্যাসহ অপারেশন করতে হয় এমন রোগী এলেই সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেয় কুড়িগ্রাম ও রংপুর হাসপাতালে।

অপরদিকে প্রতিদিন সকাল ৯ থেকে বেলা ২ ঘটিকা পর্যন্ত হাসপাতালের চিকিৎসকের অফিসের সামনে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিভদের অত্যাচারে রোগী ও রোগীর সঙ্গে আসা আপনজনরা বিপাকে পড়ে যান। ডাক্তারের চেম্বার থেকে রোগী ও রোগীর অভিভাবক বের হলেই প্রায় ১ডজন রিপ্রেজেনটিভ তাকে ঘিরে ধরে মোবাইল দিয়ে প্রেসক্রিপশন(ব্যবস্থাপত্র) ছবি তোলা শুরু করেন। এতে বিরক্ত ও হেনেস্থা হয় রোগীরা বলে তাদের অভিযোগ।

হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা বলেন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটে সেবা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মেডিকেল অফিসার ডাঃ আতিকুর রহমান বলেন, প্রতিদিন আসলে ৩ জন মেডিকেল অফিসারের পক্ষে সেবা দেয়া খুবই কষ্টকর।

এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ এ.এইচ.এম. বোরহান-উল-ইসলাম বলেন, হাসপাতালটিতে ১৫ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বর্তমান রয়েছে মাত্র ৭ জন। হাসপাতালটিতে বর্হিবিভাগে প্রতিদিন আউটডোরে ৩০০/৪০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। পাশাপাশি ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন ৪০/৫০ জন রোগী। তাই সেবা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হয়।

কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এস এম আমিনুল ইসলাম বলেন,রাজারহাট হাসপাতালটির সমস্যা নিরসনকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আশা করছি অতি শীঘ্রই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।

(পিএমএস/এসপি/মে ২০, ২০১৯)