রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বাবা শহীদুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি ছিল সাতক্ষীরা সদরের কাথণ্ডা গ্রামে। ২০০২ সালে কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়নের মাঘুরালী গ্রামের কামালউদ্দিন সরদারের মেয়ে হাফিজাকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি থেকে পাওয়া এক টুকরা জমিতে ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস শুরু করেন। দিন মজুর খেটেই চলতো তাদের সংসার। বর্তমানে শারমিন সুলতানা (১৬) ও নাহিদ নামে দু’ সন্তান তাদের। ১৯১৭ সালে নলতা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশুনা করাকালিন অভাবের কারণে আর পড়তে পারেনি শারমিন।

অভাবের পরও বাবাকে বলে অন লাইনে দু’ ভাই বোনের জন্য দু’টি মোবাইল ফোন ২০০ টাকায় বুক করায় শারমিন। অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করে মোবাইল ফোন নেওয়ার লক্ষে ছেলে নাঈমকে সঙ্গে নিয়ে রোববার সাতক্ষীরার একটি পার্সেল কাউণ্টারে আসেন শহীদুল ইসলাম। পার্সেল খুলে তার মধ্যে কিছু পিয়াজ, রসুন ও আদা দেখতে পান। নিরুপায় হয়ে ছেলের জন্য একটি মোবাইল কিনে মেয়েকে পরে দেবেন বলে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন শহীদুল। ছোট ভাইকে মোবাইল দিয়েছে মেয়ে বলে তাকে দেয়নি বলে অভিমান করে শারমিন।

একপর্যায়ে রোববার রাত ৯টার দিকে বাবা অন্যের ঘেরের বাসায় পাহারা দেওয়ার কাজ করতে গেলে নিজের ঘরে দরজা দিয়ে আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেচিয়ে ঝুলে পড়ে। তার গোঙানীতে মা ও ভাই দরজা ভেঙে শারমিনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তাস্নেলতা হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কর্তর‌্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সোমবার বাদ যোহর স্থানীয় মসজিদে নামাজে জানাযা শেষ পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

সরেজমিনে সোমবার বিকেলে মাঘুরালী গ্রামে গেলে কলেজ শিক্ষক মনিরুজ্জামান মহসিন, সরকারি কর্মকর্তা আব্দুল কাদির, আব্দুল জলিল, রোমেছা বেগমও আশরাফুজ্জামানসহ কয়েকজন জানান, অভাবের সংসার হলেও শারমিন খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। অভাবের কারণে পড়া হয়নি ঠিকই, কিন্তু একটি মোবাইলের কারণে আত্মহত্যা করতে পারে এমনটি তারা চিন্তা করতে পারেননি।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। কারো কোন অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

(আরকে/এসপি/মে ২০, ২০১৯)