রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : কলারোয়ায় সরকারি খাল ও কৃষকের প্রায় চারশ’ বিঘা কৃষি জমি দখল করে মাছের ঘের করার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় প্রতিকার চেয়ে গতকাল সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট জমির মালকসহ শতাধিক কৃষক স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

জানা গেছে, কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের পদ্মের বিল ও মাঝের বিলে যশোর পৌর এলাকার ৫৭ আব্দুল হালিম রোডের বাসিন্দা মৃত মোহাসিন মোল্যার ছেলে ফেরদৌস আহম্মেদ বাবু এ মাছের ঘের করে তাতে মাছ ছাড়ার কাজ শুরু করেছে।

দেয়াড়া গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে বদিয়ার রহমান, মৃত রমজান আলীর ছেলে মজিবর রহমান, আব্দুল জলিলের ছেলে আব্দুল খালেক, খোরশেদ সানার ছেলে ইদ্রিস আলীসহ দেয়াড়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের কৃষকরা জানান, কপোতাক্ষ নদে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষ মৌসুমে এলাকার পদ্মের বিল, মাঝের বিলসহ নিচু এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে থাকতো। গত ২০১২ সালে জলাবদ্ধ পদ্মের বিলে ফসল হয় না। অনাবাদি এসব জমিতে কেশবপুর উপজেলার পাজিয়া গ্রামের জনৈক মুকুল হোসেন শর্ত সাপেক্ষে মাছ চাষ করার কথা বলেন। এসময় তিনি এলাকার কয়েকজন জমির মালিকের নিকট থেকে পাঁচ বছরের জন্য জমি লিজ গ্রহন করে মাছ চাষ করে আসছিলেন।

গত ২০১৭ সালে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা ব্যায়ে (প্রধান মন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প) কপোতাক্ষ খনন শুরু হলে এলাকার জলাবদ্ধতা দুর হয়। এলাকার জমির মালিকরা তাদের জমিতে ফসল উৎপাদন শুরু করে। জলাবদ্ধতা না থাকায় মুকুল হোসেন লীজের জমি ছেড়ে দিয়ে এলাকার কৃষকদের ফসল ফলাতে সহায়তা করেন। চলতি মৌসুমে ওই সব জমিতে ইরি-বোরোর বাম্বার ফলনও হয়েছে।

কয়েক মাস আগে ফেরদৌস আহম্মেদ বাবু মুকুল চেয়ারম্যানের নিকট থেকে ঘেরের ডিট ভাড়া নিয়েছেন এমন দাকি করে ফসলী জমিতে মাছ চাষ করার ঘোষনা দেয়।

সম্প্রতি ওইসব জমির ধান কাটা শেষ হলে প্রভাবশালীদের সহায়তায় ফেরদৌস আহম্মেদ বাবু কৃষকের (পদ্মের বিল ও মাঝের বিল ) ওই জমিতে ৫/৬ টি শ্যালো ম্যাশিনদিয়ে পানি উত্তোলন শুরু করে মাছ ছেড়ে দিচ্ছে। গত এক মাস আগে তিনি পদ্মের বিল ও দেয়াড়া ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশনের এক মাত্র খালটিও দখল করে নেয়। আর ঘেরে পানি ধরে রাখার জন্য খালের উপর নির্মিত স্লুইজ গেটের মুখে মাটি ভরাট করে দিয়েছেন।

এলাকার কৃষকরা জানান, ফেরদৌস আহম্মেদ বাবু ঘের করার নামে বিলের প্রায় চারশ’ বিঘা ডাঙ্গা ও বিলান শ্রেনীর জমিতে পানি উত্তোলন করছেন। জমির মালিকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মাছের ঘের করলে এলাকার তিন ফসলী জমিগুলো আবাদ অযোগ্য হয়ে পড়বে। এলাকার দরিদ্র শ্রেনীর মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। খাদ্য ঘাটতিও দেখা দেব। ধান, পাট, সবজি ও রবিশস্য হবে না।

এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গতকাল কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে ফেরদৌস আহম্মেদ বাবু জানান, তিনি চেয়ারম্যান মুকুল হেসেনের ডিট ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন। এর আগে তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী মতিয়ার রহমান ও মেহেদী হাসানের সম্মতি নিয়েছেন। এখন কৃষকরা না চাইলে তিনি ঘের করা ছেড়ে দেবেন।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আর এম সেলিম শহনেওয়াজ জানান, বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(আরকে/এসপি/মে ২১, ২০১৯)