রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মেয়াদ শেষ না হতেই সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বারবার ভাঙা গড়া চলছে। গত আট  মাসে কলারোয়া উপজেলায় ছাত্রলীগের দুটি কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। 

অভিযোগ উঠেছে জেলা কমিটির সভাপতি সম্পাদক মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে বারবার কমিটি পরিবর্তন করে আসছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী জানান, ২০১২ সালে শেখ ইমরান হোসেন ও আবু সাঈদ নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০১৩/২০১৪ সালে। এরপর ফের ইমরান হোসেন ও আজাদ হোসেন নেতৃত্বাধীন কমিটি আসে ২০১৪ সালে। এ কমিটির আজাদের বিরুদ্ধে হুন্ডির টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে। এ কারণে এ কমিটিও কিছুদিন পর বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরে ২০১৬ সালে ইমরান হোসেন ও রাসেল নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত হয় ২০১৮ সালে । এরপর আসে আবু সাঈদ ও সাকিল খান জজ নেতৃত্বাধীন কমিটি। মাত্র তিন মাস আগে ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের কমিটি বিলুপ্ত করে দেয় জেলা কমিটি।

অভিযোগ রয়েছে এই কমিটি গঠনে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক তাদের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহন করেন। এই কমিটির নেতারা গোয়েন্দা পুলিশ সেজে যুগিবাড়ি এলাকার এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করে। এই নিয়ে মামলা হয়। এ কারণে তাদের কমিটি মাত্র কয়েক মাসেই বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়। এর আগে শেখ ইমরান হোসেন ও রাসেল নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয় দুই নেতার বিয়ের কারণে। তবে সাবেক সভাপতি শেখ ইমরান বলেন বিয়ের বিষয় মুখ্য নয়, সাবেক জেলা কমিটি টাকা নিয়ে কমিটি গড়ে। ফের টাকার জন্যই কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করে। তিনি বলেন আমার কাছ থেকেও সাবেক জেলা কমিটির নেতারা টাকা নিয়েছিলেন। আরও তিন লাখ টাকা চাইলেও আমি তা দেইনি।

জানা গেছে সভাপতি আবু সাঈদ ও সম্পাদক সাকিল খান জজ নেতৃত্বাধীন উপজেলা কমিটি গঠনের সময় তাদের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নেন জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে রেজাউল ইসলাম ও সৈয়দ সাদিকুর রহমান। কয়েক মাস পর সে কমিটি বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহন ও কারবারের অভিযোগ ছিল। এরপর ১০ মার্চ আট লাখ টাকা নিয়ে ফের গঠন করা হয় শেখ সাগর হোসেন ও মেহেদি হাসান নাইস নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের কমিটি। গত ১৮ মে এই কমিটির সম্পাদকের দায়ের কোপে চারটি আঙুল হারিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জিএম তুষার। ঘটনার দিন শনিবার রাতেই আট লাখ টাকায় কেনা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করেন জেলা সভাপতি ও সম্পাদক।

বারবার টাকা নিয়ে কমিটি কেনাবেচার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম বলেন ‘ যে কোনো কমিটি গঠনের সময় সেখানকার আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের মত নিয়ে করা হয়। কারও কাছ থেকে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ সত্য নয়। আবু সাঈদ - সাকিল খান জজ কমিটির বিরুদ্ধে মাদক সেবন, ডিবি পুলিশ সেজে টাকা আদায়, মাদক কারবারসহ নানা অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তা বিলুপ্ত করা হয়’। এ প্রসঙ্গে জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান বলেন ‘সাঈদ - জজ কমিটি গঠনে কেন্দ্রের চাপ ছিল। সে অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়’।

তিনি আরও বলেন সদ্য বিলুপ্ত সাগর- নাইস কমিটি গঠনে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর সুপারিশ ছিল। এ কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের প্রচার দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে টাকা নিয়ে আমরা কোনো কমিটি গঠন কিংবা বিলুপ্ত করিনি’।

(আরকে/এসপি/মে ২১, ২০১৯)