মাগুরা প্রতিনিধি : আলোকসজ্জা, গেট, প্যান্ডেল, স্টেজ, ভিডিও, ব্যান্ডপার্টি সবই হয়েছে ভাগ্যহীনা পূর্ণিমার যৌতুক বিহীন বিয়েতে। নিজের বিয়ের এমন জাকজমকপূর্ণ আয়োজন শুধুই স্বপ্নবিলাশ ছাড়া কিছুই ছিল না আদিবাসী পরিবারের পিতৃহীনা এ কণ্যার জীবনে। কিন্তু সমাজের হৃদয়বানদের আকুন্ঠ সমর্থনে রবিবার রাতে যাকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে তার বিয়ে। সোমবার বাসি বিয়ে শেষে পূর্ণিমা চলে যায় তার স্বামীর ঘরে।

পূর্ণিমা কর্মকারের বিয়েতে নিজের জাকাতের টাকা থেকে অর্থ প্রদান করে অসাম্প্রদায়িক মানবিকতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ রেখেছেন শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। বিয়ের অনুষ্ঠানে সহায়তা দিয়েছেন স্থানীয় এমপি সাইফুজ্জামান শিখর, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পংকজ কুন্ডু, পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুলসহ মাগুরার বিভিন্ন স্তরের আপামর জনগণ ও ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠানে খাবার আয়োজনেও কমতি ছিল না। ৭০ জন বরযাত্রীসহ প্রায় ৩শ মানুষকে ভুরিভোজ করানো হয়েছে আনন্দের সাথে।

অসহায় পূর্ণিমা রানীর বিয়ের অন্যতম আয়োজক শহরের নান্দুয়ালী গ্রামের বাসিন্দা অধ্যাপিকা পলি সাহা জানান- ৪ বছর আগে ক্যান্সারে ভূগে মারা যান পূর্ণিমার বাবা ক্ষিতিষ কর্মকার। মা কিনু কর্মকার অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। আর পূর্ণিমা কষ্টে সৃষ্টে পড়ালেখা করে। এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ এলাকার কর্মঠ ব্যবসায়ী বিমল দাস পূর্ণিমাকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কোনপ্রকার যৌতুক ছাড়াই পূর্ণিমাকে বিয়ে করায় আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি ও আমার স্বামী তরুণ ভৌমিকসহ এলাকার বেশ কয়েকজন উৎসাহী মানুষ পূর্ণিমার বিয়ের আয়োজন শুরু করি।

এ সময় আমরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষে কাছে বিয়েটি সুসম্পন্ন করার জন্য আবেদন জানালে তারা সর্বান্তকরনে সহযোগিতা দেন। যার ফলে আমরা এত সুন্দরভাবে তার বিয়ে দিতে পারলাম। তবে এক্ষেত্রে অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার এই যে, পূর্ণিমার বিয়েতে নিজের জাকাতের টাকা থেকে পর্যন্ত মানুষ সহায়তা দিয়েছেন। যা আমাদের ধর্মীয় সম্পৃতির অনন্য উদাহরণ ।

এ বিয়ের পুরোহিত প্রবোধ ভট্টাচার্য জানান, নিজের বাড়ি থেকে বিয়ের সকল প্রকার উপাচার নিয়ে এসে এ বিয়েটি সম্পন্ন করলাম। একজন অসহায় পিতৃহীন কন্যার বিয়ে এত ধুমধামের সাথে দিতে পেরে খুবই ভাল লাগলো। এ থেকেই প্রমাণ হয় দশেমিলে চেষ্টা করলে অনেক বড় সমস্যাও সমাধান করা সম্ভব।

মাগুরা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সাকিব হাসান তুহিন জানান- এলাকার সবাই মিলে আমরা একজন এতিম কন্যাকে বিয়ে দিয়েছি। এক্ষেত্রে সে হিন্দু কি মুসলিম সেটি মুখ্য নয়। মুখ্য ছিল আমাদের সামাজিক সদিচ্ছা। আমরা সবার কাছে পূর্ণিমার সুখি বিবাহিত জীবন কামনা করি।

বিয়ের অন্যতম আয়োজক তরুন ভৌমিক জানান, বিয়ে একজন নারীর জীবনে একবারই আসে। আর প্রত্যেকটি মেয়েরই স্বপ্ন থাকে তার বিয়েটি হবে অনেক ধুমধামের। পূর্ণিমার মত ভাগ্যহীনা মেয়েটির ধুমধামের সাথে বিয়ে দিতে পেরে খুব ভাল লাগছে। এ বিয়েটির আয়োজন করতে গিয়ে দেখলাম মাগুরার মানুষ সত্যিই অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে মনে প্রাণে ধারণ করেন। সবার অকুন্ঠ সমর্থনে একজন কর্মঠ যুবকের সাথে পর্ণিমার বিয়ে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। সবার কাছে তার জন্য দোয়া আশির্বাদ চাই।

(ডিসি/এসপি/মে ২১, ২০১৯)