মানিক সরকার মানিক, রংপুর : রংপুরে এবার আরেকটি প্রাণ ঝরে গেল ব্যাটারী চালিত অটো রিকশার চাকায়। এবার যিনি ঝরলেন তিনি রংপুরের কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুুুল খায়ের মো: মোকাররম হোসেন। মঙ্গলবার বিকালে নগরীর বাহার কাছনা এলাকায় তার জীবন প্রদীপ কেড়ে নেয় এই অটো রিকশা।

ঈদকে ঘিরে রংপুরে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে অটোরিকশা। পুলিশ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন এবং সাধারণ মানুষ সবাই জিম্মি এদের হাতে। ফলে কোনভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না অবৈধ এই অটোর চলাচল। সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখার সূত্র মতে, মাত্র ৫হাজার অটো রিকশা চলাচলের লাইসেন্স থাকলেও বর্তমানে নগরীতে চলাচল করছে কমপক্ষে ৪০ হাজার অটো।

এছাড়াও রয়েছে ব্যাটারী চালিত রিকশা। এদের নিয়ন্ত্রণ ও লাগামহীনভাবে চলাচলের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানির ঘটনা। এছাড়াও অনেকেই পঙ্গুত্ব বেছে নিয়ে বেকার জীবন যাপন করছেন। অদক্ষ অপ্রশিক্ষিত এমনকি ক্ষৌরকার, চর্মকার, আর ফুটপাথের চা দোকানি থেকে শুরু করে বেকার বখাটে নেশাখোরেরাও এখন এর চালক। এতে করে ঈদের আগে একদিকে যেমন নগরময় সৃষ্টি হয়েছে স্মরণকালের মহাযানজটের, অন্যদিকে মানুষজনকে চলাচল করতে হচ্ছে জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে।

সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান জানান, যে পরিমাণ লাইসেন্স দেয়া আছে, তা তার আগের মেয়রের আমলে। তার দায়িত্ব নেয়ার ১ বছর ৪ মাসে একটি লাইসেন্সও দেননি তিনি। কিন্তু তারপরও প্রতিদিনই বাড়ছে এর সংখ্যা।

কোনভাবেই এদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ঈদকে ঘিরে সিটির বাইরের জেলা উপজেলা থেকেও কেনাকাটা করতে অটো নিয়ে আসছে মানুষ। প্রতিদিন যেহারে বাড়ছে অটোর চলাচল তাতে এখনই নগরীতে মানুষের চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। আগামিতে যে কী ভয়াবহ রূপ নেবে সেই ভাবনায় রীতিমত আশংকিত নগরবাসী।

১৮৬৯ সালে মাত্র ৫০ কিলোমিটার বর্গ কিলোমিটার নিয়ে গোড়াপত্তন হওয়া সেই রংপুর পৌরসভা বর্তমানে সিটি করপোরেশনে রূপ নেয়ায় এর আয়তন এখন ২’শ ৪ বর্গ কিলোমিটার। মাত্র কয়েক বছর আগেও সাবেক পৌর এলাকায় লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ৫ লাখ। এখন বিভাগ এবং সিটি করপোরেশনে পরিণত হলে লোকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ লাখে। মাত্র তিন বছর আগেও নগরীর একমাত্র সরু সড়কে চলাচল করা দু:সাধ্য ছিল। তিন বছর আগে নগরীর প্রধান সড়ক এখন চার লেনে উন্নীত হওয়ার সংবাদে নগরবাসী ভেবেছিল এবার অন্তত শান্তিতে চলাচল করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা। একদিকে অটোর যাতনা, অন্যদিকে ফুটপাত দখল করে ফেরিওয়ালাদের দৌরাত্ম। বর্তমানে নগরীর ফুটপাতে হকার আর প্রধান সড়কজুড়ে অটো রিকশা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। সাধারণ মানুষ যে সামান্য পায়ে হাঁটা পথে তার গন্তব্যে যাবে, অটোর যাতনায় তারও উপায় নেই।

জানা গেছে, একজন চালক প্রতিদিন একটি অটোর জন্য মালিককে পরিশোধ করেন ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা। অন্যদিকে তার আয় হয় কমপক্ষে ৮’শ থেকে হাজার টাকা। ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে এর সংখ্যা। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, আগে প্রতি বছর ঈদের আগে নগরীর প্রধান সড়কে অটো চলাচল নিষিদ্ধ করে বাইপাস সড়কে চলাচলের ব্যবস্থা করা হলে তাতে আপত্তি জানায় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।

তাদের মতে, এতে করে গ্রাহকরা নগরীতে ঢুকতে না পারায় ব্যবসায় মার খায় তারা। আর ঈদ ছাড়া অন্য সময়ে অবৈধ অটো চলাচল বন্ধে পুলিশ কিংবা সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমান আদালত ব্যবস্থা নিলে অটো মালিক এবং চালকরা অটো বন্ধ রেখে নানা আন্দোলনের মাধ্যমে নগরময় এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ফলে তারা জিম্মি তাদের কাছে। তারা যে সাধারণ মানুষের নিরাপদ ও নির্বিঘেœ চলাচল করতে ব্যবস্থা নেবেন তা পারছেন না। এজন্য তিনি সকল সামাজিক, ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।

(এম/এসপি/মে ২২, ২০১৯)