বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন


পরিবারের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। কোনো কোনো পরিবারে যে ছেলেটি বা মেয়েটি ‘স্পষ্ট’ কথা বলে থাকে বা অনৈতিক-অন্যায় বিষষগুলোর প্রতিবাদ করে থাকে - পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য তাকে অপছন্দ করে। কিছুতেই তার মতামত বা কথাকে স্বীকার করতে চায় না। ফলে ওই পরিবারটি সুক্ষ্ম রাজনীতির শিকার হয়ে পরিবারের প্রাণোচ্ছ্বল চিন্তাভারা বা সৃজনশীল কর্মকান্ডে দারুণভাবে ছেদ পড়ে। সেই পরিবারের আলোকিত সম্ভাবনাগুলো ঝরাপাতার মতো প্রাণহীন হয়ে সুন্দর আগামীকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়।

সমাজ বা কোনো সংগঠনে যে ব্যক্তি ‘স্পষ্ট’ কথা বলেন, অনেকেই সেই ব্যক্তিকে অপছন্দ করতে থাকেন। কেউ কেউ গোপনে; আবার কেউ কেউ প্রকাশ্যে সেই স্পষ্টবলা ব্যক্তিটিকে তিরস্কার করে বলাবলি করতে থাকে- ‘হাতিঘোড়া গেল তল; মশা বলে কত্ত জল?’ এভাবে স্পষ্টবলা ব্যক্তিদের ভবিষ্যতের পাকা সড়ক কখনো সমৃণ হয় না। তাদের পথচলা খানাখন্দে পূর্ণ থাকে। প্রতি মুর্হতেই চিরশত্রু জন্মলাভ করে।

তাই বলে কি সেই ব্যক্তিটি ‘স্পষ্ট’ কথা স্পষ্টভাবে বলবেন না? নিন্দা আর তিরস্কারের অপবাদে ভুলে যাবেন স্পষ্ট কথা বলা। আমাদের বিষয়- সাংবাদিকদের স্পষ্ট বলার ব্যাপারটি। সাংবাদিকরা সব সময়ই অন্যায়ের প্রতিবাদকারী। তারা সর্বদাই অন্যান্যের ক্ষেত্রে আপোষহীন। তবে পুরো সাংবাদিক সমাজের অল্পসংখ্যক হয়তো কোন না কোনো স্বার্থের কাছে নিজেকে সপে দিয়ে বিপরীত অবস্থান পালন করে থাকেন সব সময়ই। তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আমাদের পুরো সাংবাদিক সমাজ আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামে সেই অমর বাণীর মতোই সদা প্রজ্জ্বলিত- ‘অসংকোচ প্রকাশের দূরন্ত সাহস।’

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের পরিবারের ওপর হামলা এবং তার ওপর নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারগুলো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের পরিবারের ওপর হামলার প্রতিবাদে ইতোমধ্যে দেশের কোথাও কোথাও সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটা প্রতিক্রিয়াশীল চক্র প্রবীর সিকাদারের স্পষ্ট কথায় তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছে। কারণ, তাতে করে তাদের প্রকৃত মুখ ও মুখোশ সমাজের সামনে নতুনভাবে প্রকাশিত হতে চলেছে।

সাংবাদিক প্রবীর সিকদার একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং আপোষহীন সাংবাদিক। অন্যায়-অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বদাই সংবাদ প্রকাশ করে থাকেন। এক স্বার্থান্বেষী এবং কুচক্রীমহল কর্তৃক তিনি দারুনভাবে আক্রোশ ও টার্গেটের শিকার। আমরা সারাদেশের সাংবাদিকরা আমাদের সিনিয়র সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের পরিবারের উপর হামলার তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি।

সম্ভবত ২০১২ সালের কথা। তখন আমি দৈনিক কালের কণ্ঠের শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রতিনিধি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কাজে দৈনিক কালের কণ্ঠের অফিসে গিয়েছিলাম। তখন আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রবীর সিকদার দাদা ওই পত্রিকার সহকারী মফম্বল সম্পাদক। পরামর্শমূলক অনেক কথা বলার ছলে প্রসঙ্গক্রমে তিনি আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন- ‘বাপন, ভালো এবং খারাপ দু ধরণের মানুষকে নিয়েই তোমার পথ চলতে হবে। তুমি সবসময়ই কচুপাতার মতো থাকবে। কচুপাতার শরীরে যেমন পানি কখনো আটকে থাকে না; তেমনি খারাপ কোনো আবরণ তোমার শরীরে লেগে থাকবে না। আপনি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে যাবে।...’ এই হলো আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রবীর সিকদার। আপন আদর্শের মাঝে সর্বদাই অবিচল নিষ্ঠাবান।

তিনি নিজেও কচুপাতার মতো ছিলেন এবং আছেন। তাই তার শরীরে কোনো কালিমা আজও লিপ্ত হয়নি। আসুন, আমরা সবাই প্রবীর সিকদার নামক একটি আপোষহীন কালি ও কলমের পাশে এসে দাঁড়াই।

লেখক : লেখক, সাংবাদিক ও আবৃত্তিশিল্পী।