সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : জমিতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। ইউরিয়া ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে শুরু হয়েছে, কেঁচো সারের উৎপাদন ও ব্যবহার। কেঁচো সার ব্যবহারের ফলে মাটির গুণগত বৈশিষ্ট্য বজায় রাখে। সেই সঙ্গে মাটিতে যে পরিমান জৈব সার থাকার কতা সেই পরিমান জৈব সার না থাকায় কেঁচো সার ব্যবহারের ফলে এর ঘাটতি পূরণ হচ্ছে। এমনটাই দাবী জৈব সার উৎপাদনকারী কৃষক ও উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের। 

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার দলপা ইউনিয়নের ১ নং ব্লকের এবং উপজেলা কৃষি বিভাগের ৪ নং ব্লকে ৬ টি গ্রাম। এই ৬টি গ্রামের মধ্যে বেখৈর হাটি, হোসেন নগর, ভূঞা পাড়া, দৈলা, বাহাগুন্দ ও ভাদেরা। এই ব্লকের কৃষি ও কৃষকের সার্বিক বিষয় দেখাশুনা করে থাকেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আখচার খান। তিনি বলেন, এই ব্লকের ৬ টি গ্রামের কৃষকদের মধ্যে ১শ ৬০ টি কৃষক পরিবার কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজেদের জমিতে ব্যবহার করছে এবং বানিজ্যিক ভিত্তিতে কেঁচো সার বিক্রি করে তারা স্বাবলম্বীও হচ্ছেন। বেখৈরহাটি গ্রামের কৃষক শাহ্জাহান, আলমগীর, ফজলু, হাসেম, গণী জানান, কেঁচো সার উৎপাদন করতে খুব একটা খরচ হয় না। প্রথমে কেঁচো, গোবর, মাটি একটি চাকের মধ্যে রেখে তাতে পঁচনশীল শাকসবজীর খোসা দিলেই এই সার উৎপন্ন হয়। প্রথম ৩ সেট সার তৈরি করতে ৬০ থেকে ৭০ দিন সময় লাগে।

দ্বিতীয় সেটে সার উৎপন্ন করতে ২৮ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। কৃষক আলমগীর জানান, এই সার যে কোন জমিতে নিয়মিত প্রয়োগ করলে ইউরিয়া সার ও কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে আসে। তাছাড়া ফলনও হয় দুই তিন গুণ বেশি। কৃষক হাসেমের স্ত্রী জরিনা বেগম বলেন, বিষ মুক্ত সবজি বা যে কোন ফসল উৎপাদনে এই কেঁচো সারের অনেক ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, এই কেঁচো সার ব্যবহার করে অনেকেইে শশা চাষ করছেন। এই শশা খেতে খুবই সুস্বাদু। তিনি সকল কৃষক কৃষাণীদের বাড়ির আঙিনায় কেঁচো সার উৎপাদন করার দাবী তোলেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আকচার খান জানান, প্রথম তিনটি সেটের কেঁচো সার উৎপাদন করতে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম সেটের সার বিক্রি করলেই ওই টাকা ওঠে আসে।

পরবর্তী এই সেটে আরো দুইবার সার উৎপাদন করলে সে ক্ষেত্রে আর কোন টাকা খরচ করতে হয় না। বুধবার উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলাম বেখৈরহাটি গ্রামে ছুটে যান ওই কেঁচো সার উৎপাদন কেন্দ্র দেখতে। সেখানে তারা কৃষকদের সাথে এর উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মূল্য নিয়ে খোলা মেলা কথা বার্তা বলেন। ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান এক কথায় বলেন, ইউরিয়া সার ব্যবহারের ফলে মাটির গুণাগুণ অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। কিন্তু এই কেঁচো সার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং ফলনও উৎপাদন হবে দুই তিন গুণ বেশি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলাম কৃষকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা এই কেঁচো সারের উৎপাদন আরো বেশি বেশি ভাবে করুন আমরা সমস্ত উপজেলায় কিভাবে কেঁচো সার উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে উপজেলা পরিষদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

(এসবি/এসপি/মে ২৩, ২০১৯)