চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজের (সদ্য জাতীয়করণকৃত) অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের অপসারণ দাবিতে এবং দূর্নীতির অভিযোগ জানাতে কলেজের শিক্ষকরা এবার রাস্তায় নেমেছেন। কলেজের অধ্যক্ষর অপসারণ দাবিতে এবং জনমত গঠণেল লক্ষ্যে কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষক গতকাল বৃহস্পতিবার রাস্তায় নামেন।

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, হয়রানি, স্বেচ্ছাচারীতা ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে তার অপসারণ চেয়ে লিফলেট বিতরণ করেছে একই কলেজের সহকারী শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লিফলেট বিতরণ করা হয়। লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে ওই কলেজের প্রায় ৫১ জন শিক্ষক অংশ নেন।

লিফলেটে উল্লেখিত যে অভিযোগ উত্থাপতি হয়েছে সেগুলো হল- অধ্যক্ষের অভিজ্ঞতায় ঘাটতির কারণে থাকায় সরকারি করণের আওতায় পড়বেন না এবং চাকুরিচ্যুত হতে পারেন, কলেজ সরকারি করণ হলে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত ভূয়া ২২ জন শিক্ষকসহ স্বজনদের সরকারি করণের আওতায় আনতে পারবেন না, রাতের আধারে টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের ঘুষের লাখ লাখ টাকা ফেরৎ দিতে হবে, কলেজ মার্কেটের প্রায় ৩৩ লাখ টাকা অধ্যক্ষকে নিজ তহবিল থেকে ফেরৎ দিতে হবে, কলেজের সেমিনার ফি, লাইব্রেরী ফি, প্রশংসা পত্র ও বিজ্ঞান গবেষণাগার থেকে প্রাপ্ত লাখ লাখ টাকা উপার্জন বন্ধ হওয়া, কলেজের ফুলবাগান বিস্তার ও পরিচর্যার নামে প্রতিমাসে অবৈধভাবে প্রায় লক্ষাধিক টাকা উপার্জন বন্ধ হওয়া এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে প্রাপ্ত নানা রকম আর্থিক সুযোগ-সুবিধা অধ্যক্ষের হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাই তিনি হাইকোর্টে রিট করে কলেজকে আদালতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী অনিশ্চতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। এতে কলেজটি জাতীয় করণের দ্বারপ্রান্তে এসেও জাতীয় করণ প্রক্রিয়াটি ভেস্তে যেতে চলেছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।

এরআগে কলেজ সরকারি করণের পদ সৃজনের তথ্য ছকে, অধ্যক্ষের প্রত্যয়ন পত্রে, মন্তব্যে মিথ্যা তথ্য প্রদান, ফাইলে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সরবরাহ না করাসহ অধ্যক্ষের সার্বিক অসহযোগিতার কারণে পাবনা জেলা প্রশাসক, চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কলেজের সভাপতি সরকার অসীম কুমারের কাছে ওই কলেজের বিভিন্ন বিভাগের মোট ৫১ জন শিক্ষক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে অধ্যক্ষ কর্তৃক পূরণকৃত কাগজগুলোতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জমা দেয়ার বিষয়টি সত্যতা পায় ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।

পরে ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান এবং তার কিছু অনুসারী ওই শিক্ষকদের প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চাটমোহর থানায় অধ্যক্ষসহ মোট ১২ জনকে অভিযুক্ত করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি নং-৫১১। তাং-১৪-০৫-২০১৯ ইং। এরপর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানও তাদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি নং- ৫৪৩। তাং- ১৫-৫-২০১৯ ইং। এরপরেই কলেজের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এদিকে এই জটিলতা নিরসনে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান গত সোমবার হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে চাটমোহর সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামাল মোস্তফা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের শ্রম ঘামে কলেজটি গড়ে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কলেজটি জাতীয় কররণের দ্বারপ্রান্তে এসেও তার কারণে ভেস্তে যেতে চলেছে। অধ্যক্ষ আমাদের নানা ভাবে হেনস্তা করছেন। শেষ সময়ে এসে তার (অধ্যক্ষ) অনিয়ম ঢাকতে হাইকোর্টে গিয়ে রিট করেছেন। যা মোটেই কাম্য নয়। এতে শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠান হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের মোবাইলে ফোন দিলেও কল ওয়েটিং পাওয়া যায়। পরে বার বার কল দিলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি। এর আগেও তিনি সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ করেন নি।

(এস/এসপি/মে ২৩, ২০১৯)