জামালপুর প্রতিনিধি : কর্মস্থলের সহকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত এবং প্রাণনাশের হুমকীর বিচার না পেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে জামালপুর জেনারেল হাপাতালের ওয়ার্ড বয় সংখ্যালঘু কনক চন্দ্র মিত্র।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দুই দফা তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে শান্তিমুলক ব্যবস্থার গ্রহণে বিভাগীয় পরিচালকের কাছে সুপারিশ করে পত্র দেয়ার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দায়িত্ব পালন করে আসছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই কর্মচারীকে।

জামালপুর আড়াইশ’ শর্যা জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় কনক চন্দ্র মিত্র জানান, ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে রাতে দায়িত্ব পালনকালীন একই হাসপাতালের অফিস এমএলএলএস সেলিম, স্টেচার বাহক সহিদুল, কুক মশালচী কিরণ, নুর নবী ও বদিউজ্জামন ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকে তাকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দেয়ার জন্য চাপ দেয়। সে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করায় তাকে মারধর করে এবং প্রাণনাশের হুমকী দেন। এই ঘটনায় ২০১৮ সালের ৩১ মে সহকারী পরিচালকের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন তিনি।

হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, সংখ্যালঘু কর্মচারী কনকের অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেন সহকারী পরিচালক ডা: মোঃ সিরাজুল ইসলাম। তিনি ঘটনা তদন্তের জন্য অর্থো-সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ এ এস এম ইকবাল হোসেন চেীধুরীকে সভাপতি এবং আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, সেবা তত্বাবধায়ক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড মাস্টারকে সদস্য করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠণ করেন (যার স্বারক নং জে-হাস/জাম/২০১৮/১৪৫৮) তারিখ: ০৩/০৫/১৮)। কমিটির কর্মকর্তাগণ বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত এবং স্বাক্ষ্য গ্রহণের পর ১১ জুন সহকারী পরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে ঘটনার সততার প্রমাণ পাওয়ায় অফিস সহায়ক এমএলএলএস মোঃ সেলিম হক খান, স্টেচার বাহক সহিদুল ইসলামকে গুরুদন্ড এবং কুক মশালচী কিরণ মিয়া, নুর নবী ও বদিউজ্জামানকে লঘুদন্ড দেয়ার সুপারিশ করেন। তদন্ত কমিটির সুপারিশের পর সহকারী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম দোষী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২৬ জুন জে-হাস/জাম/২০১৮/১৬৪৫ নং স্বারকে মযমনসিংহ বিভাগের বিভাগীর পরিচালকের কাছে অনুরোধ পত্র প্রেরণ করেন।

হাসপাতালের বিশ^স্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, দোষী ওই কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তৎকালিন বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ আব্দুল গণি বিষয়টি পুণ:তদন্তের জন্য জামালপুর সিভিল সার্জনকে পত্র প্রেরন করেন। যার স্বারক নং পরি: ৯স্বা:) ময়মস: বিভাগ/তদন্ত/১৮ তারিখ : ২৯/০৭/২০১৮।

বিভাগীয় পত্রের প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন গৌতম রায় বিষয়টি পুণ:তদন্তের জন্য হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের অভিযুক্ত ৫ কর্মচারীকে উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিভাগীয় পরিচালকের কাছে প্রেরণ করেন।

দুই দফায় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেয়ার পরও বিভাগীয় পরিচলক দোষী ৫ কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন কনক চন্দ্র মিত্র।

এদিকে বিভাগীয় পরিচালক দোষী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় ওই ৫ জনই বেপোয়া হয়ে উঠায় কনক চন্দ্র মিত্র আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ পিয়ন সেলিম সিন্ডিকেট গড়ে তুলে রোগীদের খাবার এমনকি ঔষধ নিয়ে নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোন কিছু বলার সাহস পায় না। এজন্য কনক চন্দ্র মিত্র বিচার পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে জামালপুর আড়াইশ’ শযা বিশিষ্ট হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: প্রফুল্ল কুমার সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে স্বীকার করেছেন তিনি।

(আরআর/এসপি/মে ২৬, ২০১৯)