জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাজার। বাজারটি  গড়ে তুলেছেন সাংবাদিক নির্যাতনকারী ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার হাসানুজ্জামান খান ওরফে রুনু খান। অবৈধ বাজারের কারণে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাঁধের তীরবর্তী অংশে গড়ে ওঠা সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ নানা স্থাপনা ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

শহর রক্ষা বাঁধের ঢালের জমি দখল করে মাছ, মাংস ও কাঁচাবাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অবৈধ বাজার বসেছে। সেখানে নিজের নামে রুনু খান দিয়েছেন কয়েকটি দোকানসহন ৪টি হোটেল। বাজারের অন্য দোকানগুলোতে ভাড়া আদায় করছেন তিনি। এতে অর্ধকোটি টাকায় নির্মিত বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উচ্ছেদের উদ্যোগ না থাকায় ক্রমেই বাজারটি বড় হচ্ছে।

গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহর রক্ষা বাঁধ ঘেঁসেই একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। ফৌজদারি মোড়ের বাঁধের ঢালে মাটি কেটে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বিশাল একটি বাজার। । বাজারের মধ্যে মাংস বিক্রির দোকান, কাঁচা মালের, মুদি, হোটেল, মুরগির, মাছের, পান দোকানসহ নানা নিত্যপণ্যের বাজার এটি। বাজারে ১০টি মুদি দোকান, ৫টি মাংস বিক্রির, ১০টি কাঁচাপণ্যের, ২টি হোটেল, ২টি পান দোকান, ২০টি মাছের ও ১টি মুরগির দোকান রয়েছে।

বাজারে উঠা-নামার জন্য বাঁধের মধ্যে বাজারের দোকানিরাই সিঁড়ি তৈরি করেছেন এবং মাটি কেটে রাস্তা করেছে
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, জামালপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার হাসানুজ্জামান খান ওরফে রুনু ওই অবৈধ বাজারের মালিক। তাঁর প্রভাবের কারণে সংশ্লিষ্ট লোকজন অবৈধ বাজারটি উচ্ছেদের সাহসও পাচ্ছে না। ক্রমেই তিনি ব্রহ্মপুত্র নদের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই অবৈধ বাজারটি উচ্ছেদ দাবি স্থানীয় লোকজনের।

পাউবোর জামালপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক রক্ষা, জামালপুর পৌরসভা ভবন, শতবর্ষী জিলা স্কুল, পৌর কমিউিনিটি সেন্টার, এলজিইডি ভবন, সার্কিট হাউস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় ও বাসভবন, সদর থানা, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, জজকোর্ট, জেলা পরিষদ ভবন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা রক্ষায় ২০১৩ সালে শহর রক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। পুরাতন ফেরিঘাট এলাকার ব্রহ্মপুত্র সেতু থেকে শহরের পাথালিয়া পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। এটি নির্মাণে প্রায় ৫১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল।

নাম গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন দোকানী জানান, পুরো বাজারটি রুনু কাউন্সিলরের দখলে। সেই এখানে দোকান বসানোর অনুমতি দিয়েছে। তার আর্শিবাদ ছাড়া এখানে কেউ দোকান করতে পারে না।

শুধুই কি বাজার কাউন্সিলর রুনু খান জাল দলিল তৈরী করে বিপুল পরিমানে খাস জমি দখলে নিয়েছেন। সেজেছেন নদীর মালিক।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খান রুনুর সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা চেষ্টা করেও মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ও মামলার পর থেকে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। (তার মোবাইল নাম্বার-০১৭১৪-৫৪৩২১৮)

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, বাজারটি পুরোই অবৈধ। বাজারের কারনে শহর রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে। একাধিক বার পৌরসভার মেয়র ও জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছি বাঁধের উপর বাজার উচ্ছেদে। কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খান রুনুর প্রভাবে বাজার উচ্ছেদ করা যাচ্ছেনা।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর সাংবাদিকদের বলেন, জাল দলিলে যতই খাস জমি দখল করুক নদীর মালিক কেউ না। তাদের কোন লাভ হবেনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধের উপর বাজারটি ভেঙে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(আরআর/এসপি/মে ২৯, ২০১৯)