রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এক ব্যবসায়ীর সরকারি লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসার জন্য ১১ বছর ভাড়া নেওয়া দোকান ঘরের অর্ধেক দখলে করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বিড়ালক্ষী গ্রামের জনৈক শামীমা ঝরণার পক্ষে তার স্বামী আব্দুর রউফ সোমবার থেকে ন’বাকী বাজারের মুকুল হোসেনের ওই দোকান ঘর দখলে নিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে বুধবার সকালে ন’বাকী বাজারে গেলে পশ্চিম বিড়ালক্ষী গ্রামের নুর আহম্মেদের ছেলে মোঃ মুকুল হোসেন সরদার বলেন, ন’বাকী বাজারের চাঁদনী স্বত্বের ২০ বর্গফুট জমি সরকারিভাবে চান্দিনা লাইসেন্সের (কেস নং-৪২৫/০৮) মাধ্যমে ১৯৯৮ সাল থেকে ইরানী বস্ত্রালয় নামে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।

মুকুল হোসেন আরো বলেন, এক মাস আগে বিড়ালক্ষী গ্রামের বিলায়েত হোসেনের মেয়ে ও আব্দুর রউফের স্ত্রী শামীমা ঝরণা ওই জমি তার পৈতৃক দাবি করে আটুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ন’ বাকী বাজার কমিটির সভাপতির কাছে আবেদন করে সুবিধা করতে না পেরে সম্প্রতি র‌্যাব-৬ এর শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পে অভিযোগ করেন। ওই ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডিএডি লুৎফর রহমান গত ২৫ মে শনিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে তাকে (মুকুল) ক্যাম্পে যেতে বলেন। দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পে যাওয়া মাত্র দোকানের কাগজপত্র দেখতে চান।

দোকান থেকে কাগজপত্র নিয়ে ক্যাম্পে গেলে ওই র‌্যাব কর্মকর্তা বিকেল ৫টার মধ্যে শামীমা ঝরণাকে দোকানের অর্ধেক দেওয়ার সিনন্ত নিয়ে পরদিন রোববার ১০টায় ক্যাম্পে যেতে বলেন। রোববার দুপুর ১২টার দিকে ভাই বুলবুল আহম্মেদ, শ্যামনগরের টেলিকম ব্যবসায়ি মোঃ তুহিন হোসেন,আব্দুল মান্নাসহ কয়েকজনকে নিয়ে তিনি ক্যাম্পে যান। আসতে দু’ ঘণ্টা দেরী হওয়ায় তাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, শামীমার জমি দেওয়ার কথা নিজ মুখে স্বীকার কর নইলে গাাড়িতে ওঠ, আয়ু ১০ বছর কমিয়ে দেব। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ভয়ে তারা শামীমাকে একলাখ টাকা দিতে চান। বিকেলে সোয়া তিনটার দিকে তাদেরকে বাড়িতে যেতে বলা হয়।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ডিএডি লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন র‌্যাব সদস্য ইরানী বস্ত্রালয়ের সামনে আসে। তিনি দোকান খোলা মাত্রই ভিতরে ঢুকে লুৎফর রহমান তার পক্ষের ভাই বুলবুল ও শামীমার পক্ষের তার স্বামী আব্দুর রউফ, নজরুল, মিজানুর রহমান ও খায়রুল ইসলাম লাভলুকে ভিতরে ডেকে কথা বলেন। পরে দোকানের বাইরে এসে ন’বাকী গণমুখি ফাউণ্ডেশনের উপদেষ্টা লুঃফর রহমানকে ও হাসিম মেম্বরকে ইফতারের আগে দোকানের অর্ধেক ভাগ করে চিহ্নিত করে বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেন। দোকনে পর্যাপ্ত মালামাল থাকায় লুঃফর রহমান ও হাসিম চখ দিয়ে দোকানের অর্ধেক নিশানা করে পরদিন সকালে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য তাকে (মুকুল) বলেন।

একপর্যায়ে সোমবার সকালে মালামাল সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়। এরপরপরই শামীমার স্বামী আব্দুর রউফ ইট বালি ও সিমেন্টে দিয়ে অর্ধেক অংশ গেথে ফেলেন একই সীমানা বরাবর দোতলার অংশ দখল করে পিলারের গায়ে সামীমা ট্রেডার্স প্রোপাইটর আব্দুর রউফ লিখে দেন। ওই র‌্যাব কর্মকর্তা তার তাছ থেকে একটি অলিখিত সাদা কাগজে সাক্ষর করিয়ে নেন।

বুধবার সকালে ন’বেকী বাজারে উপস্থিত নিয়াজ আহম্মেদ তুফান, শহীদুল ইসলাম, সুজায়েত সরদার, আহম্মদ সরদার, আব্দুল মান্নানসহ কয়েকজন বলেন, ১নং খাস খতিয়ানের জমি বা চাঁদনী স্বত্বের মালিক সরকার। শামীমা ঝরণার কোন কাগজপত্রই নেই। তাহলে ওই জমি পৈতৃক দাবি করলে র‌্যাব কর্মকর্তা তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে কিভাবে দখলে সহায়তা দিলেন তা তাদের বোধগম্য নয়।

জানতে চাইলে শামীমা ঝরণার স্বামী আব্দুর রউফ বলেন, কাগজপত্র না থাকলে ও সরকারি হলেও ওই জমি আগে তার শ্বশুর বেলায়েতের ছিল। তাই র‌্যাব ও স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি দখলে নিয়ে ব্যবসা শুরু করছেন।

বাকী গণমুখী ফাউণ্ডেশনের উপদেষ্টা লুৎফর রহমান বলেন, সরকারি সম্পত্তি নিজের দাবি করে প্রশাসনের সহায়তায় জবরদখল করার কারো এক্তিয়ার নেই। এ ক্ষেত্রে এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার সুপ্রিম পাওয়ার খাটানো হয়েছে। ডিএডি লুৎফর রহমানের নির্দেশ মত তিনি দোকান ভাগ করে দিয়েছেন মাত্র।

আটুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ন’ বাকী বাজার কমিটির সভাপতি আবু সালেহ বাবু বলেন, শামীমা ঝরণা তার কাছে জমির জন্য একমাস আগে আবেদন করেন। প্রতিপক্ষরা না আসায় তিনি আবেদনকারিকে আদালতের শরনাপন্ন হতে বলেন। তবে পরে র‌্যাব এর সহযোগিতায় শামীমা ইরানী বস্ত্রালয়ের অর্ধেক দখলে নিয়েছেন বলে শুনেছেন।

ও্যাব- ৬ মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের ডিএডি লুৎফর রহমানের সঙ্গে বুধবার বিকেল তিনটা ৩১ মিনিটে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে উপপরিদর্শক আবুল হোসেন বলেন লুৎফর সাহেব ছুটিতে আছেন। ৩১ মে ফিরবেন।

শ্যামনগর উপজেলা সহকারি (ভূমি) কমিশনার সুজন সরকার বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সাংবাদিকদের জানান, সরকারি সম্পত্তি কাউকে জবরদখল করিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কোন প্রশাসনের নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খুলনা র‌্যাব- ৬ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল সৈয়দ মোহাম্মদ নুরুস সালেহীন ইউসুফ বলেন, জনৈকা শামীমা ঝর্ণার আবেদন অনুযায়ি স্থানীয়দের সহায়তায় ন’ বেকী বাজারের একটি দোকানের একাংশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে মর্মে তিনি জেনেছেন। তবে ওই মহিলার কোন কাগজপত্র আছে কিনা তা তিনি জেনে দেখবেন। তবে তারা অসহায় মানুষের পাশে থাকেন দাবি করে বলেন বিষয়টি তিনি ভাল করে জেনে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

(আরকে/এসপি/মে ৩০, ২০১৯)