আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বাজার ধানেরবাজার মূল্য কম থাকায় সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে কৃষক মরিয়া। তবে আগৈলঝাড়া উপজেলায় মাত্র ২শ ৯১ মেট্টিক টন ধান ক্রয়ে সরকারী সিদ্ধান্তের কারণে সরকারী গোডাউনে ধান বিক্রির জন্য প্রান্তিক  কৃষকেরা এখন দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিচ্ছে। চাহিদার তুলনায় নাম মাত্র সরকারী বরাদ্দে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্তে চাষিদের কোন লাভবান হবে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার কৃষকেরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ২১মে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে আগৈলঝাড়া উপজেলায় সরকারীভাবে ধান ক্রয়ের উদ্ধোধন করেন। সরকারী ভাবে ধান ক্রয়ের খবর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়লে প্রান্তিক কৃককেরা ইউনিয়ন পরিষদ, গোডাউন, উপজেলা কৃষি অফিস, চেয়ারম্যান, মেম্বরদের কাছে ধান বিক্রির তালিকায় নাম লেখাতে প্রতিদিনই ধর্ণা দিচ্ছেন।
কৃষি অফিস সূত্র মতে, জেলার মধ্যে আগৈলঝাড়ায় সবচেয়ে বেশী ধান উৎপাদন হয়। এবছর বাম্পার ফলন হওয়ায় উপজেলায় চালের লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯হাজার ৬শ ৭১ মেট্টিক টন।

কৃষি কার্ডের আওতায় রয়েছে উপজেলার ২৬হাজার ৮শ ৪জন কৃষক পরিবার। সরকারীভাবে ২শ ৯১ মেট্টিক টন ধান ক্রয়ের চিটি পেয়েছে খাদ্য গুদাম। এদিকে অন্যান্য বছর ধান বিক্রির সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের আওতায় ৭২জন কৃষকের কাছ থেকে মাত্র ২০মন করে মোট পাঁচটি ইউনিয়নে ৩শ ৬০জন কৃষক পরিবারের কাছ থেকে সরকারী বরাদ্দের সমপরিমান ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে পারবে; কৃষকেরা এর বাইরে নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস ধান বিক্রির জন্য কৃষকের তালিকা প্রণয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদকে দ্বায়িত্ব প্রদান করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতি ওয়ার্ডে ৮জন কৃষকের নাম তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে এত স্বল্প সংখ্যক নামের কারণে উপজেলার ৯৫শতাংশ কৃষকেরাই সরকারের কাছে ধান বিক্রি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

রাজিহার ইউনিয়নের বসুন্ডা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক কমলেশ হালদার, বারপাইকা গ্রামের হরলাল সরকার, মোল্লাপাড়া গ্রামের অসীম, পরেশ হালদার, ফুল্লশ্রী গ্রামের নুরুল ইসলাম পাইক, জিয়াউর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার যে উদেশ্যে প্রান্তিক কৃষকদের কাজ থেকে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সফল হবে না। কারণ, ধান ক্রয়ের পরিমানের সিদ্ধান্ত না বাড়ালে প্রকৃত কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে পারবে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতিদিনই ধান বিক্রির জন্য অসংখ্যা কৃষক গোডাউনে ভীড় করছেন। কিন্তু তারা তালিকার বাইরে কারো ধান নিতে পারছেন না বলে জানিয়ে দিচ্ছেন।

সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ কম থাকায় অধিকাংশ কৃষক ধান বিক্রির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, ধান ক্রয়ের তালিকা তৈরীতে দরিদ্র কৃষকদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। উপ-সরকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে কৃষকের তালিকা তৈরী করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ধান ক্রয়ের আরও বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তালিকা অনুয়ায়ি ২ জুন থেকে গোডাউনে ধান নেয়া হবে। বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

(ওএস/এসপি/মে ৩০, ২০১৯)