আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছেন। আজ শনিবার দুপুরে জুনিয়র চিকিৎসকেরা কলকাতার এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। আজই মুখ্যমন্ত্রীর ওই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চিকিৎসকেরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয়ে যাবে না। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে সব চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলুক। তারা চান বিষয়টির নিষ্পত্তি হোক আন্দোলনকারী সব চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে। জুনিয়র চিকিৎসকেরা মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক বয়কট করায় আজ সিনিয়র চিকিৎসকেরাও মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

জুনিয়র চিকিৎসকেরা আরও বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার যদি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেয়, তবে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে। ভারতের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সংস্থা ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় সভাপতি শান্তনু সেন কলকাতায় এসে মমতার বৈঠকে যোগদানের আহ্বান জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে জুনিয়র চিকিৎসকেরা।

এদিকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ঘটনার মধ্যেই আজ মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নারীর মৃত্যুকে ঘিরে ফের এক চিকিৎসক লাঞ্ছিত হয়েছেন। অপরদিকে কলকাতা পৌর করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ১৪৪ জন চিকিৎসক একদিনের জন্য কাজ না করে ছুটিতে গেছেন। আজ নদীয়ার জেএমএম হাসপাতালে ৪০ জন চিকিৎসক গণ ইস্তফা দিয়েছেন। মেদিনীপুর হাসপাতালের ১০ জন চিকিৎসকও গণ ইস্তফা দিয়েছেন।

এর আগে গতকাল পর্যন্ত কলকাতার পিজি হাসপাতালের ১৭৫ জন চিকিৎসক, কলকাতা মেডিকেল কলেজের ৬৫ জন, এনআরএস মেডিকেল কলেজের ১০৮ জন, আরজিকর মেডিকেল কলেজের ১২৬ জন, সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজের ২০ জন, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ১৬ জন, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের ১১৯ জন,মুর্শিদবাদ মেডিকেল কলেজে ৩২ জন চিকিৎসক ইস্তফা দেন ।

এই চিকিৎসক ধর্মঘটের সূচনা সোমবার রাতে। কলকাতার এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই দিন এক প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যুর হয়। এই মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ এনে ওই রোগীর স্বজনেরা চিকিৎসকদের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে হাসপাতালের চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে মারধর করা হয়। এতে তাঁর মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে। শেষ পর্যন্ত কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করতে হয়। বর্তমানে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। ওই ঘটনায় ওই দিন আরও ৫ চিকিৎসক আহত হন।

এই ঘটনার প্রতিবাদে এনআরএসএর জুনিয়র চিকিৎসকেরা ধর্মঘটে নামেন। তাদের এই ধর্মঘটের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন কলকাতার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জুনিয়র এবং সিনিয়র চিকিৎসকেরা। দিল্লির এইমসসহ বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া ঘোষণা দিয়েছে, এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামী ১৭ জুন তারা দেশব্যাপী চিকিৎসক ধর্মঘট পালন করবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার এসএসকেএম বা পিজি হাসপাতালে এসে চিকিৎসকদের দুপুর দুটোর মধ্যে কাজে যোগদানের হুঁশিয়ারি দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন চিকিৎসকেরা । এরপরেই চিকিৎসকেরা দাবি তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। চিকিৎসকদের ধর্মঘটের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।

(ওএস/এএস/১৫ জুন, ২০১৯)