কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি : উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের কপালেশ্বর গ্রামে প্রোটিন হাউজ ও টোক ইউনিয়নের কেন্দুয়াব গ্রামে ডায়মন্ড নামে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে মুরগি পালনের জন্য নির্মিত দুটি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে ও নিষ্কাশিত পানিতে বিনষ্ট হচ্ছে খালবিল, নদীনালার মাছ ও কৃষি জমি। দুর্গন্ধে অতিষ্ট স্কুল-কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকাবাসী ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে ব্যাপক ভাবে। মুরগির বর্জ্য ও বিষাক্ত পানি দ্বারা আশে পাশের ১৫ গ্রামের পরিবেশ ও ফসলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। এলাকাবাসীর পক্ষে স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে প্রোটিন হাউজের বিরুদ্ধে আজ পযর্ন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি প্রসাশন। এলাকাবাসীর প্রশ্ন প্রোটিন হাউজের খুটির জোড় কোথায়।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা থেকে প্রায় ১৬কিঃ মিঃ দূরে কপালেশ্বর গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে প্রায় ১০লক্ষ লেয়ার মুরগী পালনের জন্য প্রোটিন হাউজ লিঃ নামে একটি খামার ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এলাকাবাসীর নিকট থেকে টাকা দিয়ে না দিয়ে জমি ক্রয় করে নেয় কর্তৃপক্ষ। অনেক সময় মুরগীর বৃষ্টাও মাটি রাতে আধাঁরে পাশের জমিতে ছেড়ে দেয় ফলে জমির মালিক কম মূল্যে জমি বিক্রয় করতে বাধ্য হয়। তাদের নিজস্ব দালাল ও লাঠিয়াল বাহিনী ধারা অনেক সময় জোর করে অনেক কৃষকের জমি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এলাকার কৃষক আঃ কাদির প্রধান, তমিজ উদ্দিন মাষ্টার, হেলাল উদ্দিন মাষ্টার, সামসুদ্দিন মাষ্টার, কায়কোবাদ,তাজুল ইসলামসহ আনেকে তাদের জমি বিক্রয় করতে বাধ্য হয় বলে জানান। এই দুটি খামারের মুরগীর বৃষ্টার দূর্গন্ধ ও মশা-মাছির কারনে আশ পাশে কাপালেশ্বর, নামিলা, নরদা, সোহাগপুর, বড়িবাড়ী, ভিটিপাড়া, ঝাওয়াদী, লোহাদী, বীরউজুলী, কেন্দুয়াব, ছাটারবর, বড়চালা, দীঘিরপাড়, উলুসারা, টোক নগরসহ কমপক্ষে ১৫টি গ্রামের মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও কপালেশ^র উচ্চ বিদ্যালয়, কপালেশ্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কপালেশ্বর কিন্ডারগার্টেন, নামিলা আফতাব উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল, নামিলা ফাজিল মাদ্রাসা, নামিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরদা আসর উদ্দিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেন্দুয়াব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বীর উজুলী উচ্চ বিদ্যালয়, বীরউজুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাটারবর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলুসারা কাদির ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয়, কেন্দুয়াব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলুসারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়চালা আমির উদ্দিন মাদ্রাসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা খামারের জেনারেটরের বিকট শব্দে ও দূর্গন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসা ও ক্লাসে বসে লেখা পড়া করতে পারছেনা।

আশপাশের জমিতে রাতের আঁধারে বর্জ্য এবং নিষ্কাশিত পানি ফেলায় জমিগুলোতে এখন আর কোন ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। এসব বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না গ্রামবাসী। আর এসব দূষিত বর্জ্য ও নিষ্কাশিত পানির দুর্গন্ধে অনেকেই এখন গ্রাম ছাড়া।

প্রোটিন হাউজ ও ডায়মন্ডের মুরগির বর্জ্য ও বিষাক্ত পানি দ্বারা এলাকার পরিবেশ ও ফসলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি দেখতে সরজমিনে পরিদর্শনে আসেন কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. আমানত হোসেন খান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমত আরা ও কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল ইসলাম।

অপরদিকে পাশের আমুরী নদী বিলে এসব বর্জ্য ও নিষ্কাশিত পানি ফেলে নদী ও বিল এবং আশপাশের পুকুরের মাছ মরে গেছে। আশ পাশের খোলা জায়গায় হাজার হাজার বস্তা মুরগীর বর্জ্য ফেলে রাখাতে দূর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারছে না। এতে চর্মরোগ, অ্যাগজিমা, চুলকানি, দানা দানা গোটাসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে কারখানার দূষিত বর্জ্য ও নিষ্কাশিত পানি মানবদেহে দীর্ঘ সময় লাগলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গা হতে পারে। আলসার এমনকি ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এর প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

নামিলা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, আমার দেড় বিঘা ফসলি জমি প্রোটিন হাউজ কর্তৃপক্ষ বার বার জোর করে দখল করে নিতে চাইতে। তাদের অত্যাচারে এখন আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। দূর্গন্ধ ও মশা-মাছির কারনে আমাদের এলাকায় অন্য এলাকার মানুষ আত্মীয়তা পর্যন্ত করতে চায় না।

প্রতিষ্ঠান দুইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার আহমেদকে মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুর কবীর জানান, আমি অভিযোগ পেয়েছি সরজমিন গিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমত আরা জানান, আমি এলাকবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রোটিন হাউজ ও ডায়মন্ড পরিদর্ষন করেছি। প্রয়োজনে আবারও পরিদর্ষন করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

(এসকেডি/এসপি/জুন ১৯, ২০১৯)