মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় এক যুবলীগকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ছোট ভাই এ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান কালু খানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বুধবার বেলা ১টার দিকে মাদারীপুর পৌর শহরের সবুজবাগ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত জসিম গৌড়া পলাতক আছে।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, বেলা ১টার দিকে সবুজবাগ এলাকার নদীর পাড় দিয়ে যাচ্ছিলেন নৌকা প্রতীকের সমর্থক ও পৌরসভার ৩নং ওয়াড যুবলীগের সদস্য এরশাদ মুন্সী (২৩)।

এ সময় ওত পেতে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ীর সমর্থক ও যুবলীগকর্মী জসিম গৌড়া তার দলবল নিয়ে এরশাদকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এ সময় এরশাদের আত্ম-চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে মুর্মূষ অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরশাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে ছুটে আসেন।

এরশাদ সবুজবাগ এলাকার বেলায়েত মুন্সীর ছেলে। সে ১৮ জুন মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজল কৃষ্ণ দে’র সমর্থক ছিলেন।

নির্বাচনে জসিম গৌড়া বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী চেয়ারম্যান ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ছোট ভাই এ্যাড. ওবাইদুর রহমান কালু খানের সমর্থক-কর্মী।

তবে এর আগেও এরশাদ এবং জসিম গৌড়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাব নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল।

যুবলীগকর্মী এরশাদের নিহত হওয়ার ঘটনার কিছু সময় পরেই জসিম গৌড়ার বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর মাদারীপুর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও র‌্যাব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওই এলাকাসহ আশ-পাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।

নিহতের মামা যুবলীগ নেতা কাওছার হোসেন অভিযোগ করে জানান, এরশাদ নৌকার সমর্থক হওয়ায় জসিম গৌড়া তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এরশাককে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। জসিমের বিরুদ্ধে ডাকাতি, খুনসহ একাধিক মামলা রয়েছে। নির্বাচনে আমাদের হত্যা করতে পারে, এই বিষয়টি পুলিশ সুপারকে বার বার বলা হলেও তাকে গ্রেফতার করেনি। এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আমরা জসিমসহ খুনিদের বিচার দাবী করি।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, নিহতের ঘটনার সাথে কে বা কারা জড়িত, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে এ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। কোন কারণে খুন হয়েছে, এখন তা বলা যাচ্ছে না। তবে যেই হত্যার সাথে জড়িত থাকুক না কেন, তদন্ত সাপেক্ষে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ছোট ভাই এ্যাড. ওবাইদুর রহমান খান কালু। অন্যদিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে। নির্বাচনে কোন বড় ধরণের সহিংসতা না হলেও নির্বাচন পরিবর্তী সহিংসতায় এই হত্যাকান্ড হয়েছে।
অপরদিকে মঙ্গলবার রাতে মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান শফিক খানের বাসায় হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর শহরের কলেজ গেট এলাকায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান শফিক খানের বাসায় মঙ্গলবার রাতে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার বাসায় গেটের সামনের সাটার কুপিয়েছে ও বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। তবে এই ঘটনায় কারো হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

বাড়ির তত্ত্ববধায়ক মো. মুন্সি জানান, রাতে কিছু বুঝে উঠার আগেই বেশ কয়েক যুবক হামলা করে পালিয়ে যায়। পরে আমরা মুল গেট বন্ধ করে দেই।

চেয়ারম্যানের বড় ভাই বজলুর রহমান মন্টু খান বলেন, আমার ভাইয়ের বাসা লক্ষ্য করে বোমা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। বাড়ির সামনের সাটার কুপিয়ে ভাঙচুর করেছে। আমরা আওয়ামীলীগের দলীয় লোক। আমাদের বাসাতেই যদি হামলা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা হবে? আমরা দোষিদের বিচার চাই।

মাদারীপুর সদর থানার এসআই মো. নাহিদ বলেন, এধরণের হামলা যারাই করেছে তারা খুব অন্যায় করেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। দোষিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

(এএসএ/এসপি/জুন ১৯, ২০১৯)