শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : প্রায় দু’শ বছরের পুরোনো দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী দেওয়ানজী দীঘি’টি হারিয়ে যেতে বসেছে। মাটি ভরাট করে স্থাপনা নিমার্ণ ছাড়াও পাড়ের গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। মাছ চাষের নামে দূষণ করা হচ্ছে পানি। এতে জীব-বৈচিত্র্য বিনষ্ট’র পাশাপাশি বিপর্যয় নেমে এসেছে পরিবেশের। জনসাধারণের ব্যবহার্য্য এ দীঘি’টি একটি প্রভাবশালী মহল গ্রাস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসি’র। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, পুকুরটি সাধারণের ব্যবহার্য্য এবং প্রভাবশালী মহল মাটি ভরাট করে যে স্থাপনা নিমার্ণ করছে, তা বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এনিয়ে আদালতে মামলা’রও আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসি।

এদিকে স্থানীয় মাদ্রাসা,এতিমখানা ও ঈদগাঁ মাঠ কমিটি’র নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে এলাকাবাসি আজ বুধবার দুপুরে ঐতিহ্যবাহী দেওয়ানজী দীঘি’তে আনুষ্ঠানিকভাবে মৎস্যপোনা অবমুক্ত করেছেন।

দেওয়ানজদিঘী ঈদগাহ ইসলামিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসার বাস্তবায়নে সাধারণের ব্যবহারের জন্য দেওয়ানজীদিঘী পুকুরে বিভিন্ন মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দেওয়ানজদিঘী ঈদগাহ ইসলামিয়া এতিমখানার সাধারন সম্পাদক আবু সাইদ, মাদ্রাসারা সভাপতি মোকাদ্দেক আলী, অধ্যক্ষ মাওলানা আশরাফ উদ্দীন আহমেদ, যুব নেতা আফসার আলী, ও আব্দুর রাজ্জাকসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। পুকুরে রুই, কাতলা, জাপানি, শেরন পুটিসহ বিভিন্ন ধরনের মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। প্রায় ৫ মন মাছের পোনা ছাড়া হয়।

এ সময় স্থানীয় এলাকাবাসি মো.আফসার আলী সাংবাদিকদের জানান, জনগণের পুকুরে জনসাধারণ মাছ ছেড়েছে। এমাছ বড় হলে মাদ্রাসা,এতিমখানার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি ভক্ষণ করবে। কেউ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে যাতে না পারে এজন্য এলাকাবাসি সতর্ক রয়েছে।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ফক্কাবাদ মৌজার জে.এল.নং-১৪২ এর সি.এস ৬৪৯ খতিয়ানের ২৮২৭ দাগের ৬ দশমিক ৯ একর পুকুরপাড়,২৮২৮ দাগে ৫ দশমিক ৪১ একর পুকুর এবং ২৮২৭/৩০৯৯ দাগে ১ দশমিক ৬ একর ডাঙ্গা রয়েছে। জলভাগ এবং পাড়সহ প্রায় ১১ একর আয়তনের বিশাল আকারের দেওয়ানজী দীঘি। দিনাজপুর বিরল উপজেলার ফরককাবাদ ইউনিয়নে অবস্থিত এই পুকুর পাড়ের অধিকাংশ গাছ কেটে বেশকিছু জলভাগ অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করায় পরিবেশ বির্পযয়সহ পানি সংকটের আশংকা করছে এলাকাবাসী। এলাকার জহিরুল ইসলাম,নূরুল ইসলাম,স্বপন চন্দ্র শীলসহ অনেকের অভিযোগ একটি প্রভাবশালী মহল তা অত্মসাৎ করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।ইতিমধ্যে পুকুর পাড়ে গড়ে উঠেছে বেশকিছু দালান বাড়ি ও স্থাপনা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,পুকুরে নেই আগের সেই বৈচিত্র্যতা। বদলে গেছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।নেই দেশি মাছ,শামুক,শাপলা-পদ্মসহ নানান প্রজাতিরর জলজ উদ্ভিদ।

স্থানীয় আমিরুল ইসলাম,আব্দুল গফ্ফার ও মেহেরাব আলী জানান,আগে প্রতিবছর শীতকাল এলেই নানা রং-বেরঙের নাম জানা,অজানা পাখি’র সমাগম ঘটতো দেওয়ানজী দীঘিতে। অতিথি পাখি’র বিচরণের চোখ ধাঁধানো দৃশ্য মানুষের নজর কাড়তো।পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে এ পাখিগুলিকে নামতে দেখা যেতো। বর্ণিল সব অতিথি পাখি’র কলতানে মুখরিত হয়ে উঠতো প্রকৃতি ও পরিবেশ। একটি প্রভাবশালী মহলের কড়াল গ্রাসে এখন সব হারিয়ে গেছে। অসংখ্য এলাকাবাসি’র এমন অভিযোগ।

স্থানীয় জনসাধারণ তা মানলেও বিট্রিশ আমলে জনসাধানণের জন্য ব্যবহার্য্য উল্লেখ করা নিস্কর বিশাল আকারের এই দেওয়ানজী দীঘি এখন ব্যক্তি মালিকানা’র দাবী উঠেছে। এলাকাবাসি এবং ব্যক্তি মালিকানা দাবীদাররা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। পুকুরে পাল্টা-পাল্টি মাছের পোনা অবমুক্ত এবং মাছ ধরারও প্রতিযোগিতা চলছে। জনসাধারণ মাছ ধরার উৎসবও করেছে। এনিয়ে বিস্তর অভিযোগ মালিকানা দাবিদারদের।

পুকুরের মালিকানা দাবীদার মো.আখতার আলম এবং মো.ফারুক হোসেন জানান,ওই জমির মালিক তার পিতা তমিজ উদ্দিন আহাম্মদ। জমিদার রায়তী স্বত্বে তার পিতার নামে ওই জমি পত্তন দিয়েছে। তারাই ওই জমি ভোগ দখল করে আসছেন।

তবে, তাদের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলেও মালিকানাধীনের স্বপক্ষে দলিলাদি দেখাতে কাল ক্ষেপণ করেছেন তারা। শেষ পর্যন্ত কোন দলিলাদি তারা দেখায়নি।

পুকুরটি সাধারণের ব্যবহার্য্য এবং প্রভাবশালী মহল মাটি ভরাট করে স্থাপনা নিমার্ণ ছাড়াও পুকুরের পানি দূষণ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.বি.এম রওশন কবীর বলেন,সি.এস রেকর্ডে ওই জমি জনসাধরণের ব্যবহার্য্যের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তা ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড হয়েছে। পবরর্তী রেকর্ডে জনসাধরণের ব্যবহার্য্যের কথা উল্লেখের জন্য আমরা ভূমি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।

জীব-বৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই ঐতিহ্যবাহী দেওয়ানজী দীঘি দূষণ ও দখলমুক্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে সরকারের যেমন দুষ্টি দেয়া প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন জনসচেতনার, এমনটাই তাগিদ দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা।

(এস/এসপি/জুন ১৯, ২০১৯)