বাগেরহাট প্রতিনিধি : এখন মৃত্যুর উপত্যাকায় পরিণত হয়েছে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা। একর পর এক ছয়টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে খুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে চিতলমারী বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কাওছার আলী তালুকদারের শিশু পুত্র খালিদ। চয়টি হত্যাকান্ডের মধ্যে দু’টির রহস্য এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ঘাতকদের অনেকে রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

গত ১৫ জুন সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের চৌদ্দহাজারী ঈদগাঁ মাঠে খেলা করে বাড়ী ফেরার পথে নিখোঁজ হয় ছয় বছরের শিশু খালিদ। দুদিন পর ১৭ জুন সন্ধ্যায় উপজেলার চৌদ্দহাজারী গ্রামের একটি মৎস্য খামার থেকে ভাসমান অবস্থায় ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই হত্যাকান্ডের মামলায় এজাহার নামীয় চৌদ্দহাজারী গ্রামের বাদশা তালুকদার, কামরুল শেখ এবং মেরি বেগমকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।

মালয়শিয়া প্রবাসী জাকারিয়া শেখের স্ত্রী সাদিয়াকে গত ২৭ মে সন্ধ্যায় তার শশুর বাড়ীর লোকজন গলা টিপে হত্যা করে লাশ ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ করেন তার পিতা মো. হেদায়েত তালুকদার। পুলিশ লাশ উদ্ধার করলেও ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসায় হত্যা রহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারেনি। নিহত সাদিয়ার মরিয়ম নামের দেড় বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।

খিলিগাতী বাজারে গত ২ এপ্রিল বিকালে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয় কলেজ ছাত্র রুবেল হাওলাদারকে নামে করে। রুবেল জ্ঞান হারালে তাকে ফেলে ওরা বীরদর্পে চলে যায়। গত ৩ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রুবল।

গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বিকালে পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে যাবার দুদিন পর কলাতলা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসের বস্তাবন্দি লাশ পার্শবর্তী মাছুয়ারকুল গ্রাামের একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

একই বছর ১৩ আগষ্ট রাতে চিতলমারী থানার কাছে একটি পরিত্যক্ত ঘরে গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে সবুজ বিশ^াস নাতেম এক কলেজ ছাত্রকে তার দুই বন্ধু হত্যা করে। পরে গভীর রাতে লাশ থানার পাশের একটি ডোবার কচুড়িপানার মধ্যে রেখে সবুজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়ে ঘাতক সিব্বির ও লিমন পালিয়ে যায়। নিহত শান্তিখালী গ্রামের সবুজের বাবা পরিতোষ বিশ্বাস ছেলেকে না পেয়ে পর দিন থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ ৬ দিন পর গোপালগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেলসহ দুই ঘাতককে আটকের পর তাদের দেখানো মতে সবুজের গলিত লাশ থানার পাশের একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

আমবাড়ী গ্রামের কৃষক মোসাদকে গত বছর মে মাসে তার বাড়িতে ঢোকার পথে রাতে সন্ত্রাসীরা শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ বাড়ির উঠানে ফেলে পালিয়ে যায়। লোকজনের পায়ের শব্দ পেয়ে বাড়ীর লোকজন বাইরে এসে উঠানে মোসাদের লাশ পড়ে থাকতে দেখে। পুলশ এখনো এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।

চিতলমারী থানার পরিদর্শক (ওসি) অনুকুল সরকার জানান, শিশু খালিদ হত্যা মামলার ৩ আসামীর রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। রুবেল হত্যা মামলাটি ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। আনোয়ার ও মোসাদ হত্যাকান্ড মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। তাছাড়া গৃহবধু সাদিয়ার ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ।

(এসএকে/এসপি/জুন ২০, ২০১৯)