রংপুর প্রতিনিধি : রংপুরের ঐতিহ্যবাহী মন্থনা জমিদারের কাচারী বাড়ির সামনের সোয়া’শ বছরের প্রাচীণ বিশাল একটি পুকুর বর্তমানে যা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্সের অধীনে রয়েছে, সেই পুকুরটি ভরাট করা এবং সেখানে মার্কেট নির্মাণের ঘোষণা নিয়ে ফুঁসে উঠছে রংপুর। 

ঐতিহ্যবাহী ওই পুকুর রক্ষা, মার্কেট নির্মাণ বন্ধ এবং পুকুর ঘিরে সেখানে একটি পার্ক নির্মাণের দাবিতে জেলার সকল রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং সূধী সমাজ একত্রিত হয়ে মন্থনা পুকুর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির ব্যানাওে বৃহস্পতিবার মানব বন্ধন ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশ থেকে তারা ঘোষণা, দিয়েছে অবিলম্বে পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ করে সেখানে পার্ক নির্মাণ না করলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন তারা।

অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছেন, স্থানীয় একটি কচক্রি মহল সমাজের উচু শ্রেণির কিছু মানুষকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলছে। তারা বলছেন, পুকুর ভরাটের কোন পরিকল্পনাই তাদের নেই। বরং পুকুর ড্রেজিং করে চতুর্দিকে ওয়াকওয়ে তৈরি করে সামনের রাস্তার ধারের খালি অংশে মার্কেট নির্মাণ করা হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফিন্সের রংপুর অফিসের উপ-পরিচালক ইউনুস আহমেদ জানান, এর আগে বেশ কয়েকটি ঘটনায় ফায়ার কর্মীরা অপারেশন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়।

তিনি জানান, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের কল্যাণ ট্রাস্ট রয়েছে। সেখান থেকে তাদের সহায়তা করা হয়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের ট্রাস্ট না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে এই ট্রাষ্ট গঠনের মাধ্যমেই এই মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, পুকুরের আশপাশের অধিকাংশ বাড়ির পায়খানা এবং পয়:নিস্কাশনের লাইন এই পুকুরের সঙ্গে সংযোগ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়ির ময়লা আবর্জনা ফেলে পুকুরটাকে ভরে ফেলা হচ্ছে। মানুষের পায়খানা এবং পয়:নিস্কাষনের সেই পানি বাধ্য হয়ে আমাদের ট্যাংকিতে ভরে মানুষের ঘর বাড়ি বা স্থাপনায় আগুন লাগলে সেই নোংরা পানি দিয়েই আমাদের আগুন নেভাতে হয়।

এসব বন্ধের জন্যই আমরা সমস্ত পুকুরে ড্রেজিং করে এবং এর চর্তুদিকে পাইলিং ও ওয়াকওয়ে তৈরির মাধ্যমে একটি পার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছি। আর ট্রাষ্টের উন্নয়নের স্বার্থেই নেয়া হয়েছে মার্কেট নির্মাণের কাজ। এতে যাদের বাড়ির পয়:নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও ময়লা ফেলার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তারাই পুকুর ভরাটের এই অপপ্রচারে নেমেছে।

তিনি আরও বলেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, দেশের কোথাও কোন পুকুর জলাশয় বন্ধ বা ভরাট করা যাবে না সেখানে আমরা কোন সাহসে এই কাজ করি।

এদিকে ঐতিহ্যবাহী মন্থনার জমিদার বাড়ির কাচারির পুকুর বক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক এ্যাডভোকেট দীপক কুমার সাহার সাহার সভাপতিত্বে সেখানে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ রাজনীতিবীদ মোহাম্মদ আফজাল, আ. লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, গৌতম রায়, মাজিরুল ইসলাম লিটন, মোজাফফর হোসেন চাদ, দেবদাস ঘোষ দেবু প্রমূখ। উল্লেখ্য, ১৩০৫ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩৩১ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ভবতারিণী দেবী মন্থনা জমিদারী পরিচালনা করেন।

বর্তমানে যা ফায়ার সার্ভিস অফিস। তার মৃত্যুর পর দত্তকপুত্র ভবেন্দ্র নারায়ন ছিলেন এই মন্থনা জমিদারীর শেষ জমিদার। পরবর্তীতে এখানেই গড়ে উঠে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। মোট ৩ একর ১১ শতক জমির পশ্চিমে প্রায় সোয়া একর জমিতে গড়ে এই পুকুরটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্রাষ্ট্রের প্রকল্প পরিচালকও (যুগ্ম সচিব) জানান একই কথা। পুকুর কিংবা জলশয় ভরাট করাতো প্রশ্নই ওঠে না। বরং তা সংস্কারের মাধ্যমে একটি পার্ক নির্মাণ করে রাস্তার ধারে ফাকা স্থানে মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

(এম/এসপি/জুন ২১, ২০১৯)