বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনে গত এপ্রিল পর্যন্ত ১৬ মাসে কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে আটক হয়েছে ৬৩ জলদস্যুকে। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৮ রাউন্ড গুলি ও তিন রাউন্ড গুলির খোসা। র‌্যাবের হাত ধরে একের পর এক বড় দস্যু বাহিনীগুলোর আত্মসর্পনে পর পাঁচ-ছয়জন মিলে ছোট ছোট দস্যু দল গঠন করে জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের শুরু করে। এমনই অবস্থায় সুন্দরবন জুড়ে কোস্টগার্ডের অভিযান চালিয়ে ছোট-ছোট দস্যু বাহিনীর সদস্যদের আটকে সফলতা এসেছে। কোস্টগার্ড এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

কোস্টগার্ড জানায়, সুন্দরবনে বর্তমানে বড় কোনো বাহিনী তৎপর না থাকলেও ছোট ছোট ছো-ছোট বাহিনী গড়ে উঠেছে। একটি ডিঙি নৌকা নিয়ে গড়ে ওঠা ছোট এক একটি জলদস্যুর বাহিনী জেলেদের ধরে মুক্তিপণ দাবি করছে। দস্যু বাহিনীর সদস্যরা সুন্দরবনের গহীন অরন্যের ভিতর সরু খালে নিরাপদ আবাস গড়ে তুলেছে। যে ডিঙি নৌকা নিয়ে তারা ডাকাতি করে, সেই নৌকাতেই তাদের বাস। পাঁচ-ছয়জনের ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত থাকে দস্যুরা। সরু খালের মধ্যে ডিঙি নৌকাতে ঘাপটি মেরে থাকে তারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে পৌঁছাতে পারে না।

প্রতিনিয়ত এসব জলদস্যুদের আতঙ্কে থাকে জেলে, মৌয়াল ও বাওয়ালিরা। তবে অনেক জেলে দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করেন। ক্ষেত্র বিশেষে এক একজন বনজীবীকে অপহরন করে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবি করে এসব দস্যুরা। কখনো কখনো নৌকার মাছ ও খাবার ছিনিয়ে নেয় তারা। কোস্টগার্ডের সাথে কথা বলে জলদস্যুদের সম্পর্কে জানা গেছে এসব তথ্য।

গত ১৪ মার্চ সুন্দরবনের চরদোয়ানী এলাকায় নবগঠিত জাকির বাহিনীর গুলিতে মো. আলাউদ্দিন নামে এক নিরীহ ট্রলার মাঝি মারা যান। পরে কোস্টগাড সুন্দরবনের মাঝের চরের অভিযান চালিয়ে দস্যুদের ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

গত ২৭ মার্চ ভোরে বরগুনা জেলার পাথরঘাটার বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চলের চর এলাকায় কোস্টগার্ডের অভিযানে পাঁচটি দেশীয় একনলা বন্দুক, একটি সিঙ্গেল শুটার পিস্তল ও ২১ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের সোনাইমুখী খাল সংলগ্ন এলাকায় ডাকাত দল আছাবুর বাহিনীর সঙ্গে কোস্টগার্ডের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আছাবুর বাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়।

কোস্টগার্ডের সহকারী পরিচালক (গোয়েন্দা) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম হামিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘দস্যুরা জেলেদের ছদ্মবেশে বের হয়। এজন্য তাদের শনাক্ত করা কঠিন। তারা বনের গহীনে সরু খালের মধ্যে অবস্থান নিয়ে থাকে। অনেক সময় কোস্টগার্ড বাহিনীর স্পিড বোট সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। কোস্টগার্ড সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময় গভীর বনে তাদের আস্তানায় পৌঁছালেও তারা দ্রুত সরে পড়ে। তবে মাঝে মধ্যে দস্যুরা আটকও হয়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ ও জননিরাপত্তার পাশাপাশি সুন্দরবনে জলদস্যুতা, বনদস্যুতা ও ডাকাতি দমনে কোস্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্য সংখ্যা যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এত বৃহৎ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কোস্টগার্ড সদস্য খুবই কম। জনবল বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনসহ উপকূলে দস্যুদের দমন করা সহজ হবে।’

(এসকে/এসপি/জুন ২১, ২০১৯)