ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল এখন নিজেই অসুস্থ রোগী। হাসপাতালে ঢুকলে দেখা যাবে প্রধান ফটকেই পানি লেগে আছে। ছাদ দিয়ে পানি চুয়ে পড়ছে। আবর্জনার স্তুপ পড়ে আছে রোগীর বেডের পাশে। নোংরা জিনিসপত্র ফেলা হচ্ছে ওয়ার্ডের ভেতরে। টয়লেটের পানি নুয়ে পড়ে শ্বেতশ্বেতে হয়ে গেছে মেঝে। কুকুর চলা ফেরা করছে ওয়ার্ডে। দেখার যেন কেউ নেই। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হচেছ চরম দুর্ভোগে। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের রোগীরা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুখানপুকুরী ডি-হাট থেকে আসা কফিল উদ্দীন অভিযোগ করে বলেন তার স্ত্রীকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করেছেন। কিন্তু যে বেডে থাকতে দেয়া হয়েছে সেখানে ময়লার স্তুপ পরে আছে। চারপাশে শ্বেতশ্বেতে, মেঝেতে পানি লেগেই থাকে, প্রচন্ড দুর্গন্ধ।

সদর উপজেলার রাজাগাঁও গ্রামের ডালিম চন্দ্র রায়ের স্ত্রী মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। তাদেরও একই অভিযোগ। শহরের কলেজপাড়ার রফিকুল ইসলাম বলেন অব্যবস্থাপনার কারনে দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ এলাকা থেকে আসা খাদিজা বেগম অভিযোগ করে বলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে প্রায় সময়ে রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।

অভিযোগ উঠেছে ঔষধপত্র নিয়েও । সার্জারী বিভাগে আটোয়ারী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন তিন দিন হলো শুধু মাত্র একটি ট্যাবলেট পেয়েছি। আর কোন ওষুধ পায়নি। টেপ, সিরিঞ্জ, ক্যানোলাসহ সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। একই অভিযোগ করেন শহরের মাদ্রাসা পাড়া মহল্লার রহিমুল ইসলাম(ছদ্ম নাম) তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন স্যালাইন ষ্ট্যান্ডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে রোগীদের আনা বাঁশ ও গাছের মরা ডাল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক হাসপাতালে কর্মরত একজন সিনিয়র নার্স বলেন অনেক সময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় রোগীদের সামাল দিতে নিজের টাকায় প্রতিমাসে ৪-৫’শ টাকার ওষুধ রিজার্ভে রাখতে হয়। একই কথা বলেন অপর এক নার্স।

২০১৮ সালের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁও সফরে এসে ১'শ শয্যার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালটি আড়াই’শ শয্যায় উন্নীত করে ৭ তলা ভবন উদ্বোধন করেন। এটি নির্মান কাজে ব্যায় ধরা হয়েছিল ২৬ কোটি সাড়ে ৬৯ লাখ টাকা। দরপত্র চুক্তি অনুয়ায়ী ২০১৬ সালের জুন মাসে কাজ শেষ করে ভবনটি হস্তান্তরের কথা থাকলেও এখনো খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে নির্মান কাজ।

প্রধানমন্ত্রী নতুন এই ভবনটি উদ্বোধনের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাজ শেষ করার তাগাদা দিয়ে কয়েক দফায় চিঠি দিলেও এখনো কাজ শেষ করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নির্মান কাজের সময় পুরনো ভবন অপসারনে দেরী হওয়ায় কাজ শেষ করতে দেরী হচ্ছে। আর গণপূর্ত বিভাগ বলছে, নির্মান কাজ শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপর চাপ অব্যাহত আছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওকে এন্ড কেএ জয়েন্ট ভেঞ্চারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন গণপূর্ত বিভাগ বুঝে নিতে চাইলে আমরা এ মাসের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে পারবো। ঠাকুরগাঁও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জান সরকার বলেন আমাদের টার্গেট ছিল জুন মাসের মধ্যে কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পন্ন না হওয়া সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ সংগোগের প্রক্রিয়া চলছে আশা করছি জুলাই মাসের মধ্যে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা.এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন আমি এ মাসে যোগদান করেছি। এখন প্রশিক্ষণে আছি। তবে বিষয় গুলো গুরুত্বসহকারে দেখা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

(এফআইআর/এসপি/জুন ২৪, ২০১৯)