স্টাফ রিপোর্টার : সন্তান প্রসবের সময় প্রয়োজন ছাড়া প্রসূতির সিজার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। মঙ্গলবার (২৫ জুন) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তিনি এ রিট দায়ের করেন। বুধবার (২৬ জুন) এ বিষয়ে শুনানি করা হবে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার সকালে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে মামলাটির শুনানি করতে যান ব্যারিস্টার সুমন। তবে ওই বেঞ্চে জনস্বার্থ নিয়ে করা রিট বেশি থাকায় রিটটি শুনানির অনুমতি দেয়নি। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে গিয়ে রিটের অনুমতি গ্রহণ করেন। রিট অনুমতির পর ফেসবুকে লাইভে এসে এ বিষয়ে কথা বলেন ব্যারিস্টার সুমন।

রিট আবেদন ও শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের অনুমতি নিয়েছেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুমন।

রিটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড কাউন্সিলের সভাপতি এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে রিট আবেদনে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না -এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।

অপর রুলে বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় যেসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গর্ভবতী নারীদের অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন বা সি-সেকশন করে সেগুলো নিষিদ্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

গত ২১ জুন প্রকাশিত বিবিসিসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ রিট আবেদন করা হয়। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বলছে, বাংলাদেশে গত দুই বছরে শিশু জন্মের ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের হার বেড়েছে ৫১ শতাংশ।

বিষয়টিকে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার উল্লেখ করে সংস্থাটি বলছে, এতে বাবা-মায়েদের সন্তান জন্মদানে ব্যাপক পরিমাণে খরচের ভার বহন করতে হচ্ছে।

সিজারিয়ানের কয়েকটি ঝুঁকি

সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানে নানা রকম ঝুঁকি রয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে তার কয়েকটি বিষয় তুলে ধরাও হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, মা ও শিশু উভয়কেই এমন অস্ত্রোপচার ঝুঁকিতে ফেলে।

শিশু জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ফলে ইনফেকশন ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় অনেক দীর্ঘ সময় লাগে। এছাড়া সিজারিয়ানের কারণে প্রাকৃতিক জন্মের লাভজনক দিকগুলোও নষ্ট হতে পারে।

সন্তান স্বাভাবিকভাবে প্রসব হলে তার শরীর কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া গ্রহণ করতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। অস্ত্রোপচারের ফলে এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সে যেতে পারে না। যার ফলে এসব ভালো ব্যাকটেরিয়া সে পায় না।

এছাড়া মায়ের বুকের দুধ পান করার জন্য মায়ের সাথে শিশুর যে শারীরিক নৈকট্যে আসা দরকার সিজারিয়ান হলে সেটি প্রয়োজনের তুলনায় দেরিতে ঘটে। কারণ, মায়ের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য শিশুকে তখন কিছু সময় দূরে রাখা হয়। একদম শুরুর দিকে মায়ের বুকের দুধে বাড়তি উপকারিতা রয়েছে। তা থেকেও শিশু বঞ্চিত হয়।

প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে

২০১৮ সালে বাংলাদেশে বাবা-মায়েরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে খরচ করেছেন প্রায় চার কোটি টাকার বেশি। জনপ্রতি গড়ে ৫১ হাজার টাকার বেশি। সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানের হার বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মারাত্মক হারে বেড়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যত শিশু জন্ম নেয় তার ৮০ শতাংশই হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে।

সংস্থাটি আরও বলছে, ২০১৮ সালে যত সিজারিয়ান হয়েছে তার ৭৭ শতাংশই চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় ছিল। তারপরও এমন সিজারিয়ান হচ্ছে। ২০০৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ৪ থেকে ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সেভ দ্য চিলড্রেন এমন অপ্রয়োজনীয়ে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ঠেকাতে ডাক্তারদের ওপর নজরদারির পরামর্শ দিচ্ছে। এমন প্রবণতার জন্য সংস্থাটি আংশিকভাবে বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা খাতের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছে। সংস্থাটি বলছে, কিছু অসাধু চিকিৎসক এর জন্য দায়ী, যাদের কাছে সিজারিয়ান একটি লাভজনক ব্যবসা।

বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং নবজাতক ও মাতৃ-স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. ইশতিয়াক মান্নান বলেন, ‘চিকিৎসক এবং চিকিৎসা সুবিধা আসলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে না গিয়ে অস্ত্রোপচার করতে অনুপ্রাণিত করে। অস্ত্রোপচারের এই জনপ্রিয়তা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে, দিনকে দিন মায়েরা আরও বেশি এ অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের দিকে ঝুঁকছেন।’

(ওএস/এসপি/জুন ২৫, ২০১৯)